মাটি ও মানুষের কবি হিসেবেই পরিচিতি তার। নিজ নামের চেয়ে পল্লীকবি নামেই খ্যাতি ফুটে উঠেছে জসিম উদ্দিনের। জসীমউদদীনের একেকটি কবিতা যেন বাংলার একেকটি গ্রাম।
তার কবিতায়, গানে ও নাটকে কৃষিনির্ভর ও নদীমাতৃক বাংলার গাঁয়ের মানুষের কথা ফুটে উঠেছে।
পুরো নাম মোহাম্মাদ জসীমউদদীন মোল্লা। বাংলা সাহিত্যে তিনি পল্লী কবি হিসেবে পরিচিত। পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী আজ।বিখ্যাত এ কবি ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২১ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এর পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৯ সালে বিএ এবং ১৯৩১ সালে এমএ শেষ করেন।
পাঠ চুকিয়ে কবি ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগ দেন। এর পর ১৯৩৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন এবং তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে যোগ দেন। তিনি ডেপুটি ডিরেক্টর পদে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এখানেই কর্মরত ছিলেন।
রবীন্দ্রযুগের কবি হয়েও রবীন্দ্র প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে পল্লী জীবনকে অবলম্বন করে জসীমউদদীন নির্মাণ করেছেন স্বকীয় এক কাব্যভুবন।
তার সাধনায় খুলে গেছে বাংলা কবিতার নতুন এক দুয়ার। তার লেখা ‘কবর’ কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় অবদান। নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট কবির শ্রেষ্ঠ দুটি রচনা। এ দুটি রচনা পৃথিবীর বহু ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।
পল্লীকবি জসীমউদদীন শুধু একজন কবিই নন, তিনি একজন গীতিকার এবং একজন গান সংগ্রাহকও। জসীমউদদীন ১০ হাজারেরও বেশি লোকসংগীত সংগ্রহ করেন। তার সংকলিত এসব লোকসংগীতের বিশাল একটি অংশ জারিগান ও মুর্শিদা গানে স্থান পেয়েছে।
১৯৬৯ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। এ ছাড়া রয়েছে একুশে পদক ১৯৭৬ ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৭৮ (মরণোত্তর)।
১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ বাংলার এ পল্লীকবি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। কবির কবর কবিতা অনুযায়ী ডালিম গাছের তলায় কবিকে সমাহিত করা হয়।
Leave a reply