আরেকটি মন্থর প্রবৃদ্ধির বছরে পা দিয়েছে বিশ্ব। প্রধান সূচকগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে ২০২০ সালে অব্যাহত শ্লথগতির দিকে যাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি। উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী মন্দার ধারাবাহিকতা প্রবৃদ্ধির রাশ টেনে ধরবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দ্য ইকোনমিস্টের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)।
ইআইইউ’র সর্বশেষ প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ সালের মন্দার পর সদ্য বিদায়ী বছরে সর্বনিু প্রবৃদ্ধি হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। ২০১৯ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। নতুন বছরটি গত বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও আশানুরূপ হবে না। ২০২০ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ধনী অর্থনীতির দেশগুলো ২০১৯ সালের মতো মোটামুটি একই গতির প্রবৃদ্ধি হবে। তবে মার্কিন অর্থনীতি এ বছর লক্ষণীয়ভাবে নিরুত্তাপ হবে। চীনের অর্থনীতিও হবে মন্থর। দু’দেশের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণেই এটা ঘটবে। এ দুই অর্থনীতির কারণে অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক দুর্বলতা বাড়াবে। ইউরো জোনের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন অর্থনীতি ১১ বছরের টানা প্রবৃদ্ধির পর এ বছর সমস্যার দিকে ধাবিত হবে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে দেশটিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ হ্রাস পেতে পারে। চলতি বছরটি চীনের জন্য হবে এক মন্থর বছর। ২০২০ সালে দেশটির গড় ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। কিন্তু ৫ দশমকি ৯ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। তবে প্রবৃদ্ধির চেয়ে কঠিনতম বিষয়ে হবে দেশটির চরম দারিদ্র্য দূর করা।
যুক্তরাজ্যে ২০২০ সালে ব্রেক্সিট একদানা স্কুইডের মতো কাজ করবে। চলতি বছর ব্রেক্সিটের কারণে দেশটির ক্ষয়ক্ষতি স্পষ্টতর হবে। ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত ভাঙনের দিকে ধাবিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে যুক্তরাজ্য তার ভূমিকা হারাবে। ২০২০ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ১ শতাংশ। বিপর্যস্ত ভারতের অর্থনীতি। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার গত সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিু পর্যায়ে নেমেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা কমে নেমে এসেছে সাড়ে ৪ শতাংশে। ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি পরপর সাত প্রান্তিকে অব্যাহতভাবে কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ শতাংশ। ২০২০ সালে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
২০২০ সালে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে নতুন শুল্ক আরোপিত হলে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে যেতে পারে। এদিকে ২০১৯ সালজুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার কমিয়েছে। ফলে এখন নতুন করে বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হবে না। চলতি বছর বিশ্ববাজারে তেলের অতি সরবরাহ ঘটতে পারে। তেলের চাহিদা দিনে ১২ লাখ ব্যারেল বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধানের কারণে তেলের দর ব্যারেলপ্রতি বার্ষিক গড় ৬৬ ডলারে শেষে আসবে। চীনের জ্বালানি চাহিদা প্রায় ১ শতাংশ বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা প্রায় স্থির থাকবে। ভারতের বাড়বে ৪ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহ দুটোই বাড়বে। এলপিজির চাহিদা বাড়বে ৭ শতাংশ। ২০২০ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্পের প্রসার অব্যাহতভাবে ঘটবে। ব্যবহারও বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ১৯ শতাংশ হবে। এ জ্বালানির ব্যয় কমবে এবং প্রতিযোগিতার এক নতুন যুগ শুরু হবে।
Leave a reply