সাইবার যুদ্ধে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান?

|

মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরান যে কোনো সময় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

যদিও পরমাণু শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গের স্বল্প ও দূর পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্রের শক্তি সম্পন্ন দেশ সামরিক যুদ্ধে জড়াবে কিনা সে প্রশ্ন চলছে।

তবে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাইবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইরান। এমনটাই জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান।

গত রোববার মার্কিন ওয়েবসাইট আক্রান্ত হওয়ার পর এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, কাসেম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের পর শনিবার অফলাইন ও অনলাইন দুই মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রথম আঘাত আসে। এদিন বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের কাছে রকেট হামলা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি নিয়ে শংকিত হয়েছেন মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাহলো, শনিবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাকারদের দখলে চলে যায়।

এদিন আমেরিকার ফেডারেল ডিপোজিটরি লাইব্রেরি গ্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিকৃত ছবি যুক্ত করা হয়।

এতে দেখা যায়, ইসলামী রেভল্যুশনারি গার্ডের মুষ্ঠি ট্রাম্পের মুখে আঘাত করছে। এতে রক্তাক্ত হয়েছেন ট্রাম্প। নিচে আরবি, ফারসি ও ইংরেজি ভাষায় মার্কিন আগ্রাসনে নিপীড়িত দেশ ও জনতার উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন হ্যাকাররা।

বিশ্লেষকদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে ইরানের হ্যাকাররাই হানা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাদের যুক্তি হলো সাইবার খাতে বেশ শক্তিশালী ইরানের সাইবার যোদ্ধারা। বিশেষকরে এ খাতে ২০১০ সালের পর বিপুল বিনিয়োগের পর ইরানের এ ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ে।

তার প্রমাণ দিতে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে ও ২০১৩ সালে একটি ছোট বাঁধের ওপর সাইবার হামলা চালায় তেহরানের হ্যাকাররা।

যে কারণে স্বাভাবিকভাবে অভিযোগের আঙুল উঠেছে ইরানের দিকে। তবে এখনই ইরানকে দোষ দিতে চাইছে না ওয়াশিংটন।

মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটিজের সাইবার নিরাপত্তার মুখপাত্র সারা সেনডেক বলেন, হ্যা, মোস্ট ওয়ান্টেড ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে মার্কিন সেনারা হত্যার পর এ সাইবার হামলা ঘটে। তবে ইরান থেকে সাইবার হামলা চালানো হয়েছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রমাণসাপেক্ষে বিবৃতি দেয়া হবে।

সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি ফায়ারআইয়ের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক লি ফস্টার গার্ডিয়ানকে বলেন, কয়েক বছর ধরেই ইরান ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে অনলাইনে স্পর্শকাতর কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছে। ইতিমধ্যে অনলাইনে নিজেদের একটি স্বতন্ত্র নেটওয়ার্ক গড়েছে ইরান। তাদের এ নেটওয়ার্কের লক্ষ্যই হলো ইরানবিরোধী মতাদর্শের বিরুদ্ধে বিশেষকরে মার্কিন মুলুকে সাইবার আক্রমণ চালানো।

গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাত, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায়ও সাইবার আক্রমণ চালানো হয়েছে। এসব হামলার অনেকগুলোতে তেহরান জড়িতে বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র।

সেই সূত্র ধরেই বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, অর্থনৈতিকভাবে চাপে থাকা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রচলিত যুদ্ধে জড়াবে কিনা তা নিশ্চিতভাবে না বলা গেলেও দেশ দুটি সাইবার যুদ্ধের মুখোমুখি এখন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply