ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ নিয়ে বেশ চিন্তিত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে দলটিকে। কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীকে বুঝিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানো হয়েছে।
তবে এখনও অনেক ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (আজ) বিদ্রোহীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয় ওই নির্দেশনায়।
বুধবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা দক্ষিণ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব হুমায়ুন কবির এবং উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এবং উত্তরের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এসএম মান্নান কচি স্বাক্ষরিত পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই নির্দেশনা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হুমায়ুন কবির বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গঠিত কমিটি, মহানগর আওয়ামী লীগ এবং থানা পর্যায়ের নেতারা বিদ্রোহীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়ে পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আমাদের বৈঠকও হয়েছে।
দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল। নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান তারা। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা আছে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
দুই সিটিতে মেয়র পদে একক প্রার্থী দিলেও কাউন্সিলর পদে এখনও সক্রিয় বিদ্রোহীরা। তবে গত সময়ে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের কয়েকটি নির্বাচনে ‘বিদ্রোহীদের’ শাস্তি না হওয়ায় এবারও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হলে কিছু হবে না, এমনটা কোনো প্রার্থীর মনে করার সুযোগ এবার কোনো ভাবেই রাখতে চায় না ক্ষমতাসীন দলটি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ও মহানগরের পাশাপাশি থেকে বিদ্রোহীদের বোঝানোর কাজ করেছেন নেতারা।
কেন্দ্রীয় ও নগরের নির্দেশনার কথা জানিয়ে সতর্ক করা হয়েছে তাদের। তাদের বলা হয়েছে- দলসমর্থিত এসব প্রার্থীর বিরোধিতা করার অর্থ হচ্ছে, দল ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরোধিতা করা। এ অবস্থায় কেউ সরে না গেলে সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়তে হবে তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে দলের টিম লিডার তোফায়েল আহমেদ বুধবার বিকালে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী রাখতে। একাধিক প্রার্থী যেখানে ছিল, তাদের আমরা বসানোর চেষ্টা করছি। অনেক জায়গায় আমরা সফলও হয়েছি। শেষ পর্যন্তও যারা দলসমর্থিত প্রার্থীদের বিপক্ষে মাঠে থাকবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা পরের বিষয়। তখন দেখা যাবে। আপাতত আমরা এখন প্রার্থী নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি।
এদিকে আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয়ভাবে একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও দুই সিটির ১২৯টি ওয়ার্ডে দুই শতাধিক বিদ্রোহী প্রাথী রয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ২০ জন আছেন বর্তমান কাউন্সিলর। অর্ধশতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় সমর্থন পুনর্বিবেচনা ও কাউন্সিলর প্রার্থী উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
আবার অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে। আবেদন ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত দুই সিটিতে অন্তত ৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী পরিবর্তনও করেছে আওয়ামী লীগ।
এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কিছু কিছু জায়গায় প্রশ্ন উঠেছে। এ জন্য তৃণমূল পর্যন্ত আমরা টিমওয়ার্ক করছি। কোথাও বিতর্কিত প্রার্থী থাকলে এবং প্রার্থীর অবস্থান কী- এগুলো আমরা ‘ফাইন্ড আউট’ করব এবং যথাযথ প্রার্থী ঘোষণা করার ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা করব।
আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে অর্ধশতাধিক দলীয় সমর্থনবঞ্চিত নেতা সমর্থন পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছেন। ঢাকা উত্তরের ৩নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিন্নাত আলী মাদবর। এই আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বরাবর লেখা চিঠিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগ মিলিয়ে অন্তত সাতজন নেতার স্বাক্ষর রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলসমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
ঢাকা উত্তরের ২০নং ওয়ার্ডে মো. নাসির আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, দখলদারিত্বের অভিযোগ তুলেছেন ওয়ার্ডেরই একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন তার নেতৃত্বেই তিতুমীর কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার মঞ্চ ভাঙা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া এক প্রার্থীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলের থানা পর্যায়ের নেতারা। ৫৮নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পাওয়া সফিকুর রহমান সাইজুল বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি তাদের। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর বোনজামাইয়ের ভাই।
Leave a reply