সামরিক উত্তেজনায় বেসামরিক বিমান ভূপাতিত করার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বহুবার সামরিক হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে বিভিন্ন দেশের বেসামরিক বিমান। হতাহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কখনও ইচ্ছাকৃত, কখনও অনিচ্ছায়।
ইউক্রেনের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার বার্তা সংস্থা আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে ইউক্রেনগামী একটি বিমান বুধবার উড্ডয়নের ৩ মিনিটের মাথায় বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৭৬ আরোহীর সবাই নিহত হন। ইরানের সামরিক বাহিনী এরই মধ্যে স্বীকার করেছে তারা ভুল করে বিমানটি ভূপাতিত করেছিল।
৮ জানুয়ারি ২০১৯ : ইউক্রেন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৫২
কমান্ডার কাসেম সোলেমানি হত্যার বদলা নিতে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটিতে অন্তত ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এর ঘণ্টা কয়েক পরেই তেহরানে বিধ্বস্ত হয় ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান। মারা যান ১৭৬ বেসামরিক যাত্রী।
১৭ জুলাই ২০১৪ : মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ-১৭ যাত্রীবাহী বিমানটি আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাচ্ছিল। পূর্ব ইউক্রেনের তাকাশে থাকা অবস্থায় এটি বিধ্বস্ত হয়। ২৯৮ যাত্রীর সবাই মারা যান। সে বছরই জুনে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত দল জানায়, এমএইচ-১৭ বিমানটি আসলে গুলি করে ভূপাতিত করে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।
২৩ মার্চ ২০০৭ : বেলারুশের কার্গো বিমান ভূপাতিত
২০০৭ সালের ২৩ মার্চ সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বেলারুশ এয়ারলাইন্সের ইলিউশিন ২৭৬ কার্গো বিমান একটি রকেটের আঘাতে ভূপাতিত করা হয়। এতে ১১ জন যাত্রী নিহত হন। যাত্রীরা প্রত্যেকেই বেলারুশের খ্যাতনামা প্রকৌশলী এবং প্রযুক্তিবিদ।
৪ অক্টোবর ২০০১ : সাইবেরিয়ার ফ্লাইট ১৮১২
সাইবেরিয়া এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটিতে ছিলেন ৭৮ যাত্রী। যাদের অধিকাংশই ছিলেন ইসরাইলের নাগরিক। তারা যাচ্ছিলেন ইসরাইলের তেলআবিব থেকে রাশিয়ার নোভোসিবিরস্ক শহরে। তবে কৃষ্ণসাগরের রাশিয়া উপকূলে এটি বিধ্বস্ত হয়। পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন, তার দেশের বিমান মহড়া থেকে ছোড়া গোলার আঘাতে ধ্বংস হয় রাশিয়ার যাত্রীবাহী বিমানটি।
৩ জুলাই ১৯৮৮ : ইরানের এয়ারফ্লাইট ৬৫৫
যুদ্ধবিমান ভেবে পারস্য উপসাগরে ইরানের বেসামরিক উড়োজাহাজ এয়ারবাস এ ৩০০ গুলি করে ভূপাতিত করে যুক্তরাষ্ট্র। মারা যান বিমানে থাকা ৬৬ শিশুসহ ২৯০ যাত্রীর সবাই। ইউএসএস ভিনসনেস রণতরী থেকে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় বিমানটি লক্ষ্য করে। ওই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ইরানকে ক্ষতিপূরণও দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ : কোরিয়ার ফ্লাইট ০০৭
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আকাশসীমায় প্রবেশ করায় গুলি করা হয় কেএএল ০০৭ বিমানটিকে। মারা যান ২৬৯ বিমানযাত্রী। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করে জানায়, তারা ভেবেছিল এটি কোনো গুপ্তচর মিশন।
২৭ জুন ১৯৮০ : ইটাভিয়ার ফ্লাইট ৮৭০
ইতালির এ বিমানটি কেন বিধ্বস্ত হয়েছিল তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল অনেক বছর। দেশটির বোলগোনা থেকে সিসিলি যাওয়ার পথে তাহহেনিয়ান সাগরে এটি বিধ্বস্ত হয়। ২০১৩ সালে ইতালির সর্বোচ্চ আদালত রায়ে জানান, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দুই ইঞ্জিনের ম্যাকডোনাল ডগলাস ডিসি-৯ বিমানটির এমন পরিণতি হয়।
১২ ফেব্রুয়ারি ও ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ : এয়ার রোডেশিয়া ফ্লাইট ৮২৭ ও এয়ার রোডেশিয়া ফ্লাইট ৮২৫
রোডেশিয়া হচ্ছে বর্তমান জিম্বাবুয়ে। কারিব থেকে উড্ডয়নের পরপরই বিমান দুটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। এ উড়োজাহাজ দুটিতে আঘাত হানে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি স্টেলা ক্ষেপণাস্ত্র। দুই ঘটনায় মারা যান ১০০ জন।
২৪ আগস্ট ১৯৩৮ : দ্য জিওলিন হামলা
হংকং থেকে চংকং যাচ্ছিল চীনা আমেরিকান ডিসি-২। সে সময় যুদ্ধে বেঁধেছিল চীন আর জাপানের মধ্যে। জাপানের যুদ্ধবিমান গুলি ছোড়ে এ উড়োজাহাজটিতে। মারা যান ১৪ জন। তবে বেঁচে গিয়েছিলেন মার্কিন পাইলট। শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা।
Leave a reply