নারীদের জন্য নিরাপদ নয় দক্ষিণ সিটির রাস্তাগুলো

|

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা লক্ষ্মীবাজার। এখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুটি সরকারি কলেজ এবং অনেক স্কুল ও কোচিং সেন্টার রয়েছে। তারই একপাশে ঢাকার একমাত্র নৌবন্দর সদরঘাট এবং দেশের বৃহৎ প্রকাশনা মার্কেট বাংলা বাজার। অন্যপাশে নগরীর সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততম এলাকা কোর্টকাচারি। রাজধানীর নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন এসব রাস্তায়। যাতায়াত করেন নারীরা। আসুন দেখে নিই এ পথগুলো নারীদের জন্য কতটা নিরাপদ!

ফারজানা ইয়াসমিন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। থাকেন যাত্রবাড়ী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের চেয়ে সুবিধার কারণে গণপরিবহনেই বেশি যাতায়াত করেন তিনি। ফারজানা বলেন, ভার্সিটি শেষে কয়েকটা স্টুডেন্ট পড়াই এ এলাকায়। টিউশনি শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়। কোর্টকাচারি পেরিয়ে রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে যাত্রাবাড়ীর গাড়িতে উঠি। কখনও কখনও রিকশায়ও যাতায়াত করি। গাড়ি কিংবা রিকশা না মিললে কিছুদূর হেঁটে গাড়ি খুঁজতে হয়। কিন্তু রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে ধোলাইখাল পুরো পথই গা ছমছম করা পথ। মানুষজনের চলাফেরাও কমে যায়। যারা আসা যাওয়া করে তারা রিকশা অথবা গাড়িতে থাকে। এর মধ্যে কেউ যদি নারীদের হেনস্তা করতে চায় তবে তা খুবই সহজ। সন্ধ্যার একটু পর যখন দোকানগুলো বন্ধ হতে শুরু করে তখন ধোলাইখাল থেকে দয়াগঞ্জ পুরো রাস্তাই অনিরাপদ হয়ে ওঠে নারী এবং সাধারণ পথচারীদের জন্য।

তবে সবচেয়ে ভয়ের কথা হল দয়াগঞ্জ থেকে ধোলাইপাড়ের দিকের রাস্তায় একটু সামনে এগোলেই ইবনে সিনা হাসপাতালের পর একটি রাস্তা বামে চলে গেছে। এ রাস্তায় দিনের বেলায়ও মানুষজনের চলাচল কম। এটি অনেকটা গলির মতো। এ রাস্তায় সন্ধ্যার পর খুব ভয়ংকর নীরব হয়ে ওঠে। অপরাধীরা চাইলেই এখানে যে কোনো ধরনের অপরাধ ঘটাতে পারে। তবে পুলিশের টহল থাকায় সম্প্রতি এখানে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

লক্ষ্মীবাজার একটি কসমেটিকসের দোকানে কাজ করেন আফসানা আক্তার। থাকেন জুরাইন। বেশিরভাগ যাতায়াত করেন পোস্তগোলা টু সদরঘাটের লেগুনাতে। তিনি বলেন, সদরঘাট থেকে একটি রাস্তা সোজা পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের দিকে চলে গেছে। সন্ধ্যার পর এ রাস্তা খুবই নীরব হয়ে যায়। ফলে নারীদের জন্য এ পথে যাতায়াত পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ক’দিন আগেও এখানে একটি মার্ডারের ঘটনা ঘটে। নদীর পাশঘেঁষা রাস্তা হওয়ায় এখানে কোনো ঘটনা ঘটিয়ে নদীতে ফেলে দেয়া খুবই সহজ। গেল মাসেই কেরানীগঞ্জের এক স্বামী এখানে এসে স্ত্রীকে নদীতে ফেলে হত্যা করে। পরে অবশ্য অপরাধী আটক হয়। আমি বলতে চাচ্ছি, এ রাস্তাটি পুরোপুরিই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সন্ধ্যায় দেরি হলেও জ্যাম ঠেলে কষ্ট করে অন্য রাস্তায় যাতায়াত করি তবুও ওই রাস্তায় যাতায়াত করি না।

পোস্তগোলা-জুরাইন-সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি এলাকায়, পাড়া-মহাল্লায় এমনকি প্রধান সড়কেও নারীদের জন্য একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ জোন রয়েছে। এসব জায়গায় নারীরা লাঞ্ছিতও হচ্ছেন। তবে অনেক ঘটনা সংবাদে না আসার কারণে কিংবা নিজেদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কারণে থানা পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপও নিতে পারছে না।

পোস্তগোলা থেকে নারায়ণগঞ্জ এবং যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রোডের আগ পর্যন্ত প্রায় অনেকখানি রাস্তা নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ দুই মহাসড়কে রাতের বেলায় পর্যাপ্ত আলোর যেমন অভাব রয়েছে তেমনি রয়েছে অনেক ঝোপঝাড় কিংবা অপরাধের নিরাপদ জায়গা। শ্যামপুর, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী এবং ডেমরা থানায় এসব জায়গা থেকে প্রায়ই অজ্ঞাতনামা-বিকৃত নারী-পুরুষের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে।

এ প্রসঙ্গে ডিএমপি শ্যামপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে কী ঝুঁকিপূর্ণ আর কী ঝুঁকিপূর্ণ নয় তা আলোচনায় আসে। যেহেতু এখন আমার এলাকায় কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি তাই আমি বলতে পারি এখানে নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জোন নেই। তবে রাতের বেলায় টহল এবং মানুষের নিরাপত্তায় নিশ্চিত করতে আমাদের আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই।

ডিএমপি ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রাকিবুল হাসান বলেন, এ জোনটা একটু অপরাধপ্রবণ এলাকা। এর নানাবিধ কারণও আছে। রাস্তায় সার্বক্ষণিক আমাদের টহল পুলিশ থাকে। তবে সন্ধ্যার পর আলো না থাকায় নীরব এলাকাগুলো নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এ ছাড়াও রাজধানীর নারীদের জন্য দক্ষিণের হাসনাবাদের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আশপাশের রাস্তাঘাট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে মেয়েরা বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসে কিংবা এমনিতে ঘুরতে এলেও দিনেদুপুরে লাঞ্ছনার এমনকি খুনেরও শিকার হয়। তুলনামূলক নীরব এলাকা হওয়ায় এবং ঝোপঝাড় বেশি থাকায় অপরাধীর সহজ জোনে পরিণত হয়েছে এ এলাকাগুলো।

সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply