চলতি বছরে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার জন্য প্রয়োজন সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যয় হবে ২ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি পানি, পয়ঃনিষ্কাশনে ৯৮২ কোটি এবং খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় হবে ৯৪৫ কোটি টাকা।
অবশিষ্ট অর্থ যাবে অন্যান্য খাতে। এখন পর্যন্ত পুরো অর্থ সংস্থানের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘বলপূর্বক মিয়ানমার বাস্তুচ্যুত নাগরিক (রোহিঙ্গা)’ সংক্রান্ত টাস্কফোর্স সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সভায় রোহিঙ্গাদের জন্য অন্য বছরের তুলনায় সম্প্রতি বিদেশি সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সরকারের গঠিত টাস্কফোর্সের প্রধান পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সভায় বলেন, চলতি বছর রোহিঙ্গাদের জন্য তিনটি কৌশল হাতে নেয়া হয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের রক্ষা, দ্বিতীয় সুন্দর জীবনযাপনের ব্যবস্থা এবং শেষে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দাদের ঠিকমতো লালনপালন করা।
কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, টাস্কফোর্স সভায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় স্বাস্থ্য সংকট নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের বিষয়টি ২০২০ সালের পরিকল্পনার প্রথম এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় টাস্কফোর্স। এছাড়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার উদ্দেশে কোনো দাতা সংস্থা এলে তার নিবন্ধন সাত দিনের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে।
আর রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে নিয়মিত ডায়ালগ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সূত্রমতে, রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশি সহায়তা কমছে- এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে টাস্কফোর্স বৈঠকে। সেখানে বলা হয়, ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছরে সহায়তার পরিমাণ ২ শতাংশ কমেছে। যেখানে ২০১৯ সালে মোট সহায়তার পাওয়া গেছে ৬৭ শতাংশ, সেখানে ২০১৮ সালে পাওয়া গেছে ৬৯ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বড় দাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সহায়তা করছে। ইতিমধ্যে অনেক দেশ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সহায়তা করছে।
বৈঠকে দাতা সংস্থাগুলোকে আগের মতো এগিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ নিতে বলা হয়। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরতে বলা হয়।
জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিদেশি এনজিওগুলোর কার্যক্রম হ্রাস পেলেও বেড়েছে দেশীয় এনজিওর কার্যক্রম। বিশেষ করে স্থানীয় এনজিও’র অংশগ্রহণ ২০১৯ সালে ছিল ৪৬ শতাংশ, সেখানে চলতি বছরে বেড়ে ৫৩ শতাংশে উঠেছে।
একই সময়ে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর অংশগ্রহণ কমেছে ৯ শতাংশ। বর্তমান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও এবং দাতা সংস্থা মিলে ১১৭টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
সভায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আরও উন্নয়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়। কারণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ায় ৩ লাখ ১৬ হাজার লোক বসবাস করছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের চাপের কারণে এসব জনগণ সমস্যায় পড়েছে।
বিশেষ করে সেখানে কর্মসংস্থান কমেছে, কমেছে মজুরিও। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম অনেক। এসব বিবেচনায় রেখেই স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। যে কোনো পরিকল্পনায় থাকছে টেকনাফ ও উখিয়ার জনগণও।
জানা যায়, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর। পহেলা জানুয়ারি থেকে তৃতীয় ফেইজের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে টাস্কফোর্স বৈঠকে বিগত সময়ের অগ্রগতি ও ২০২০ সালের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
সূত্রমতে, টাস্কফোর্স বৈঠকে রোহিঙ্গাদের দ্বারা বিঘ্নিত আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। কারণ ইতিমধ্যে অনেক অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। খুন, গুম ও মাদক ব্যবসায় তারা জড়িয়ে পড়ছে।
কীভাবে এসব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সেটি পরিকল্পনা নেয়া হয়। বৈঠকে কক্সবাজারের ডেপুটি কমিশনার বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রতিনিয়তই সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। তবে রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে কিছু সমস্যায় মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনা ঘটছে।
জাতিসংঘের কান্ট্রি রিপ্রেজনটেটিভ মি. টমো হজুমু বলেন, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকায় জাতিসংঘ প্রধান কার্যালয় এ বছর রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সংকট নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয়। তবে ২০২০ সালের জন্য টাস্কফোর্স যে পরিকল্পনা নিয়েছে, জাতিসংঘ এর সঙ্গে একমত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী দিনে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০২০ সালের পরিকল্পনায় এটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই পরিকল্পনাটি তুলে ধরা হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে।
এ ধরনের পরিকল্পনার পেছনে যৌক্তিকতায় বলা হয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানো পর্যন্ত তাদের নিয়ে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন আছে। এজন্য যৌথ পরিকল্পনাটি গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: যুগান্তর।
Leave a reply