চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর গ্রামে সুমাইয়া খাতুন নামে ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে বাড়ির সামনে থেকে কৌশলে ওই শিশুকে নিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার মরদেহ লুকিয়ে রাখা হয় একটি শিম ক্ষেতের মধ্যে। হত্যার পর ঠাণ্ডা মাথার খুনি পাশের পুকুর থেকে গোসল শেষে নিজ বাড়িতে অন্য দশ জনের মতই ঘুমিয়ে ছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি ঘাতক মমিনুলের।
পুলিশের রাতভর অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে হত্যার লোমহর্ষক বিবরণ। রাতেই গ্রেফতার হয়েছে ঠাণ্ডা মাথার এই খুনি। রোববার বিকালে পুলিশ অভিযুক্ত মোমিনুলকে আদালতে হাজির করলে সে বিচারক মানিক দাসের সামনে সুমাইয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়।
জবানবন্দীতে মোমিনুল বলেছে, দুই বছর আগে নিহতের ভাই পারভেজ তাকে মারপিট করে। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই তার ছোট বোনকে ধর্ষণ শেষে হত্যার পরিকল্পনা করি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার সুমাইয়াকে কৌশলে ডেকে নিয়ে হত্যা করি।
ঘাতকের জবানবন্দীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলোচিত এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা থানার ইন্সপেক্টর মাহবুবুর রহমান।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দীনের দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে সুমাইয়া ছোট। সে স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্রী। শনিবার দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে নিখোঁজ হয় সে। পরিবারের সদস্যরা সম্ভব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করেও তার সন্ধান মেলাতে ব্যর্থ হন। বিকালে গ্রামের মসজিদের মাইকসহ আশপাশে গ্রামগুলোতে মাইকিং করা হয়। সন্ধ্যার পরও শিশু সুমাইয়ার সন্ধান না পাওয়ায় রাতে খবর দেওয়া হয় দামুড়হুদা থানা পুলিশকে।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সুকুমার বিশ্বাস জানান, খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে সুমাইয়ার বাড়ির অদূরে একটি শিম ক্ষেতের মধ্যে তার বিবস্ত্র মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুঁটে যায় পুলিশ। শিশু সুমাইয়ার মরদেহের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি খালি শ্যাম্পুর প্যাকেট।
দামুড়হুদা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবু রাসেল জানান, মরদেহের পাশে পড়ে থাকা খালি শ্যাম্পুর প্যাকেজের সূত্র ধরেই পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট অনুসন্ধানে নামে। রাতভর অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে ভোরে হত্যার মোটিভ উদ্ধারে সক্ষম হয় দামুড়হুদা থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস। আটক করা হয় শিশু সুমাইয়ার প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের ছেলে মোমিনুল (২০) কে।
পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে সুমাইয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে ঘাতক মোমিনুল। মোমিনুলের স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও জানায়, দুই বছর আগে সুমাইয়ার বড় ভাই পারভেজ একটি চুরির বিষয় নিয়ে তাকে প্রকাশ্যে মারপিট করে। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে তার ছোট বোনকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে মোমিনুল। শনিবার দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে বাড়ির পাশে খেলা করার সময় তাকে কৌশলে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর ঘাতক সুমাইয়াকে নিয়ে যায় বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের একটি নির্জন শিম ক্ষেতে। সেখানে দুই দফায় ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের পর তার পরনের সালোয়ার দিয়ে নির্মমভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর পাশের পুকুর থেকে গোসল শেষে গ্রামে স্বাভাবিক ঘোরাফেরা করতে থাকে চতুর মোমিনুল।
এদিকে, শিশু সুমাইয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে তার বাবা নাসির উদ্দীন রোববার দুপুরে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং ৪। এ মামলায় একমাত্র আসামি করা হয় ঘাতক মোমিনুলকে। মামলায় অভিযোগ করা হয় পূর্ব বিরোধের জের ধরে বখাটে মোমিনুল শিশু সুমাইয়াকে পাশবিক নির্যাতনের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
পুলিশ এ মামলায় মোমিনুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে বিকালে আদালতে সোর্পদ করে। আদালতের বিচারক মানিক দাসের উপস্থিতিতে ঘাতক সুমাইয়া ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে।
স্থানীয় পারকৃষ্ণপুর -মদনা ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম জানান, ঘাতক মোমিনুল এলাকার চিহ্নিত বখাটে ও চোর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। গ্রামে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথেও জড়িতর অভিযোগে মোমিনুলের কয়েক দফায় বিচার সালিশও হয়েছে গ্রামে।
এদিকে, বিকালে নিহত সুমাইয়ার মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
Leave a reply