ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি:
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মধ্যে এখন সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জকির বাহিনী। মূলত মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই সশস্ত্র সিন্ডিকেট। নেতৃত্বে রয়েছেন নয়াপাড়া নিবন্ধিত ক্যাম্প এর সি ব্লকের হাজী আমিনের ছেলে জকির(২৮)। দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত এই বাহিনীতে অন্তত ২০ জন সদস্য রয়েছে। কোথাও কোথাও এই বাহিনী ‘সালমান শাহ’ বাহিনী নামেও পরিচিত। ইতিমধ্যে এই বাহিনীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২ র্যাব সদস্য। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১২ জন র্যাব সদস্য। জকির বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গাও।
ইয়াবা পাচার ছাড়াও জাকির বাহিনী এখন টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি ও মানবপাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। টেকনাফের নয়াপাড়া, জাদিমুরা ও লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত এক বছরে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়ান্ত্রে সজ্জিত এই বাহিনী।
গত ৩০ ডিসেম্বর টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরের পাশে জকির বাহিনীর আস্তানায় অভিযানে গেলে র্যাব সদস্যদের উপর গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা। এসময় কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের সদস্য সৈনিক ইমরান ও কর্পোরাল শাহাব উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের ইনচার্জ (এএসপি) শাহ আলম জানিয়েছেন, গত ৩০ ডিসেম্বর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শীর্ষ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান জকিরকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। ঐ সময় জকির ও তার বাহিনীর সদস্যরা র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ।
গত ৩ ফেব্রুয়ারী টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা করে জকির বাহিনী। জকির ও তার বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা শিবিরে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এই সময় শিশুসহ ১৩ রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ২০ জন।
গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোরে টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরে অভিযানে গেলে আবারও র্যাবের উপর হামলা করে জকির বাহিনী। এতে অন্তত ১২ জন র্যাব সদস্য আহত হয়। র্যাবের গুলিতে মারা যায় জকির বাহিনীর সদস্য ইলিয়াছ ডাকাত। সে টেকনাফের-২৬ নম্বর ক্যাম্পের ডি-ব্লকের বাসিন্দা। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় বন্দুক, একটি ওয়ান শ্যুটার গান ও চারটি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-১৫ কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মেহেদি হাসান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মধ্যে জকির বাহিনীর হাতে এখন সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রয়েছে। তাদের হাতে একাধিক অত্যাধুনিক বিদেশ অস্ত্রও আছে। মূলত ইয়াবা পাচার, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজে তারা জড়িত। এই বাহিনীকে ধরতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান মেজর মেহেদি। যেকোনোভাবেই এই বাহিনীর প্রধান জকিরসহ বাহিনীর সবাইকে ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে রয়েছে আবদুল হাকিম ডাকাত, জকির, কামাল ও সালমান খান। তাদের নেতৃত্বে সক্রিয় রয়েছে- কামাল, খায়রুল আমিন, নুরারী, আমান উল্লাহ, মাহমুদুল হাসান, হামিদ, রাজ্জাক, বুলো ওরফে বুইল্লা, রফিক, মাহনুর ওরফে ছোট নুর। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবা পাচার, অপহরণ, ডাকাতি, খুন ও মানব পাচার সহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
Leave a reply