প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সম্পর্কে আগেই সতর্ক করে দেয়া সেই চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল উহানে ওই চিকিৎসক মারা যান বলে বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
১২ জানুয়ারি থেকে লি ওয়েনলিয়াং হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তার শরীরে করোনাভাইরাসের বিষয়টি ধরা পড়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি। রোগীর দেহ থেকে লির শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা যায়।
২৭ বছর বয়সী এ চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর নিয়ে চীনা গণমাধ্যম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের গ্লোবাল টাইমস প্রথমে লির মৃত্যুর খবর দেয়, পরে তা প্রত্যাহার করে বলে ওই চিকিৎসক সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন।
চীনের পিপলস ডেইলিও লির মৃত্যুর খবর জানিয়ে টুইট করেছিল।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারীতে নাজুক পরিস্থিতি চীনের। একদিকে শত শত মানুষের মৃত্যু, আরেকদিকে বিশ্বে আর্থ-সামাজিকভাবে প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছে দেশটি।
ভয়ংকর এ পরিস্থিতির মাত্র এক মাস আগেই ভাইরাসটির মহামারী নিয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার হুশিয়ারি দিয়েছিলেন লি ওয়েনলিয়াং। সেই হুশিয়ারি তখন পাত্তাই দেয়নি সরকার।
উল্টো তাকে ভয় দেখিয়ে মুখবন্ধ করে দেয় উহান পুলিশ। সেই ডাক্তারকেই এখন ‘হিরো’র আসনে বসাচ্ছে পুরো চীন।
বিবিসি জানায়, চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর সংগ্রহ করা হচ্ছিল। করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং সহকর্মী ডাক্তারদের সতর্ক করার চেষ্টা করছিলেন।
কিন্তু সে সময় তাকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি পুলিশ তাকে শাসিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। এক মাস পরে সেই চিকিৎসকই সবার কাছে হিরো হয়ে উঠেছেন।
হাসপাতালের বিছানা থেকে চিকিৎসক লি চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েবোতে জানিয়েছেন সেসব কথা। ওয়েবোর পোস্টে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি লি ওয়েনলিয়াং। উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ।’
চিকিৎসক লি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে কাজ করছিলেন। সে সময় তিনি সাতজনের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখতে পান।
প্রথমে লি ভেবেছিলেন, এটি সার্স ভাইরাস। ২০০৩ সালে বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। লি ভাবেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ উহানের হুয়ানান সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে হয়েছে।
ভাইরাসে আক্রান্তদের তার হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ৩০ ডিসেম্বর লি তার ফেলো চিকিৎসকদের একটি চ্যাট গ্রুপে বার্তা দেন। সেখানে তিনি ফেলো চিকিৎসকদের করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক করেন।
সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিরোধমূলক কাপড় পরার পরামর্শ দেন। চিকিৎসক লি তখনও জানতেন না, এ করোনাভাইরাসটি একেবারেই নতুন।
ডিসেম্বর মাসে করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করার সময় চিকিৎসক লি পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর কর্মকর্তার সঙ্গে সফর করেন।
তারা তাকে একটি চিঠিতে সই করতে বলেন। ওই চিঠিতে লির বিরুদ্ধে মিথ্যা মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, এ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের কথা বলে তিনি সমাজের ক্ষতি করছেন।
চিকিৎসক লিকে হাতে লেখা ওই চিঠিতে পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমরা আপনাকে সতর্ক করছি। যদি আপনি এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান তাহলে আপনাকে বিচারের আওতায় আনা হবে। আপনি কি বুঝতে পেরেছেন?’ চিকিৎসক লি উত্তরে জানান তিনি বিষয়টি বুঝেছেন। পুলিশ বলছে, গুজব ছড়ানোর কারণে যে আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল চিকিৎসক লি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।
জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে চিকিৎসক লি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা জানিয়ে একটি চিঠি দেন। এ সময়ের মধ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে সে ঘটনাটিও দেরিতে ঘটে।
Leave a reply