ধর্মগুরু রাম রহিমকে নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড তো কম হয়নি। এবার তেমনই আরেক গুরুর সন্ধান মিলেছে ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে, নাম বিরেন্দ্র দেব দিক্ষিত। তার আশ্রম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কমপক্ষে ৪৮ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে।
গত ১৯ ডিসেম্বর নগরীর আধ্যাত্নিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আশ্রমে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, আশ্রমটি যেন এক দুর্ভেদ্য দুর্গ। কাঁটাতার ও একাধিক তালা দেওয়া ফটক ডিঙিয়ে আমরা তাদেরকে উদ্ধার করেছি।
আশ্রম কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের এ ধরনের শত শত আশ্রম রয়েছে যেখানে হাজার হাজার নারীর ও কম বয়সী মেয়ে ভক্তরা ঈশ্বরের সেবায় নিয়োজিত আছেন।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছ, আশ্রমের সুনাম ক্ষুন্ন করতেই এ ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে। নারী ভক্ত ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর, এ ধরনের কোনো কাজ এখানে করা হয় না।
তারা আরও জানিয়েছে, তাদের গুরু হিন্দু দেবতাদের অবতার; তিনি বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে মেল বন্ধনে পৃথিবীতে এসেছেন।
এদিকে ধর্মগুরু দিক্ষিত সম্পর্কে খুব কম তথ্যই এ পর্যন্ত জানা গেছে। এমনকি এ গুরু এখন কোথায় আছে, তাও জানে না পুলিশ।
উল্লেখ্য, পরিবারের সদস্যরা উধাও হয়ে যাচ্ছেন- এ বিষয়ে দিল্লি হাই কোর্টে তিনটি পরিববার মামলা দায়ের করলে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। আদালতে ৩২ বয়স্ক একজন নারী জানান, ২০০০ সালে ওই আশ্রমে থাকা অবস্থায় দিক্ষিত কর্তৃক তিনি ধর্ষণের শিকার হন। তিন বছর পর তার পরিবার ছোট বোনটিকেও ওই আশ্রমে দিয়ে দিতে ‘বাধ্য’ হয়।
ভারতীয় আইনের বাধ্যকতা থাকায় ওই নারীর পরিচায় প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
দিল্লি রাজ্য সরকারের নারী বিষয়ক সংস্থার প্রধান স্বাতী মালিওয়াল বলেন, দিক্ষিত নিজেকে হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের অবতার বলে দাবি করে; পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এ দেবতার ১৬ হাজার স্ত্রী ছিল। অভিযানকালে প্রায় ২০০ নারী ও মেয়েকে শোচনীয় অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, “আশ্রমে অবৈধ কার্যকলাপ চালানো হয়। ওখানে ঘর ভর্তি ওষুধ পাওয়া গেছে-যার বেশির ভাগের গায়েই কোনো নাম লেখা ছিল না। নারীদেরকে তাদের দেহ দিক্ষিতের কাছে ‘সমর্পণ’ করা বিষয়ক ধর্মীয় বাণী সম্বলিত বইও পাওয়া গেছে।“
আদালতে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, আশ্রমে নারীরা পশুর মতো জীবন যাপন করে। এখনও ১৬৮ জন নারী ও ২৫ জন পুরুষ সেখানে বসবাস করছেন। তাদের সকলেই ভগ্ন স্বাস্থ্যের ও মাদকাসক্ত।
শুধু তল্লাশির হুকুম থাকায় ও বসবাসকারীরা যেতে না চাওয়ায়, তাদেরকে সরানো সম্ভব হয়নি; জানান স্বাতী মালওয়াল।
তিনি আরও জানান, দিল্লিতে থাকা আট আশ্রমের মধ্যে পাঁচটিতে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে, এ ধর্মগুরুর বহু আশ্রমের ঠিকানা এখনও অজানাই রয়ে গেছে।
ভারতে ধর্মগুরুরা আর্থিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে বেশ শক্তিশালী। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা থেকে যায় সব ধরনের জবাবদিহীতার উর্ধ্বে।
যমুনা অনলাইন: এফএইচ
Leave a reply