প্রতি বছর জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট বায়ুদূষণে প্রতিদিন ৮০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেশি) ক্ষতির শিকার হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। এ ক্ষতি বৈশ্বিক জিডিপির ৩.৩ শতাংশ। ২০১৮ সালে বায়ুদূষণের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক লোকসান হয়েছিল ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৪৬ লাখ কোটির বেশি)। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যু হয় ৪৫ লাখের বেশি মানুষের। বুধবার পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) ও গ্রিনপিস সাউথইস্ট এশিয়ার যৌথ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে। বায়ুদূষণে বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি বিষয়ক এটাই প্রথম এমন গবেষণা প্রতিবেদন। এতে বিশেষ করে তেল, গ্যাস ও কয়লা পোড়ানোয় যে ক্ষতি হয় সেদিকে জোর দেয়া হয়েছে। খবর এএফপির।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোয় সৃষ্ট বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার চীনের মূল ভূখণ্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। প্রতি বছর এই তিন দেশের ক্ষতি হয় যথাক্রমে- ৯০ হাজার কোটি ডলার, ৬০ হাজার কোটি ডলার ও ১৫ হাজার কোটি ডলার। এছাড়া জার্মানি, জাপান ও রাশিয়ার প্রতি বছর ক্ষতি হয় যথাক্রমে- ১৪ হাজার কোটি ডলার, ১৩ হাজার কোটি ডলার ও ৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ার সময় বাতাসে মিশে যাওয়া ক্ষতিকর কণাগুলোর কারণে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যু হয় ৪৫ লাখ মানুষের। এর মধ্যে চীনে অকাল মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ লাখ ও ভারতে ১০ লাখ। নতুন এ তথ্যের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দেয়া তথ্যের মিল রয়েছে। ডব্লিউএইচও’র তথ্যানুসারে, বায়ুদূষণ সংশ্লিষ্ট কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর মারা যান আনুমানিক ৪২ লাখ মানুষ। এর মধ্যে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার ও শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে মারা যান অনেকে।
গ্রিনপিস ইস্ট এশিয়ার বিশুদ্ধ বাতাস বিষয়ক ক্যাম্পেইনার মিনোউ সন বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে হওয়া বায়ুদূষণ আমাদের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য হুমকি। এতে লাখো মানুষের প্রাণ যায়। লাখো কোটি ডলার ক্ষতি হয়। তিনি আরও বলেন, কিন্তু এ সমস্যার সমাধান কিভাবে করতে হয় তা আমরা জানি। যেমন- নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস ব্যবহার করে, ডিজেল ও পেট্রোলচালিত মোটরগাড়ি বাদ দিয়ে ও গণপরিবহন চালু করে।
গবেষকরা জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে হওয়া বায়ুদূষণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি ও অকাল মৃত্যুর হিসাব করেছেন দূষণের ধরন ও দেশ হিসেবে। জীবাশ্ম জ্বালানির উপজাত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের কারণে প্রতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩৫ হাজার কোটি ডলার ও ওজোনের কারণে ৩৮ হাজার কোটি ডলার ক্ষতির শিকার হয়। এখন পর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ায় নির্গত সবচেয়ে ক্ষতিকর দূষক পদার্থ হচ্ছে ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫)। এর জন্য প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতি হয় ২ লাখ কোটি ডলার।
নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের কারণে বছরে ৫ লাখ, ওজোনের কারণে ১০ লাখ এবং পিএম ২.৫ এর কারণে ৩০ লাখ মানুষ অকাল মৃত্যুর শিকার হন। পিএম ২.৫ এর কারণে প্রতি বছর পাঁচ বছরের কমবয়সী প্রায় ৪০ হাজার শিশু প্রাণ হারায়। এ কণা শিশুর ফুসফুস এবং রক্তনালিতে ঢুকে পড়ে তার শ্বাসযন্ত্রের বিকল ঘটায়।
Leave a reply