নানারকম ডায়েটের মধ্য থেকে অনেকেই কিটো ডায়েটকে বেছে নিচ্ছেন। কিটো ডায়েট করে নিজের আমূল পরিবর্তন করেছেন বলে জানাচ্ছেন অনেকেই।
কিটো ডায়েটে মূলত কার্বোহাইড্রেটকে এড়িয়ে চলা হয়। কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কার্বোহাইড্রেটকে পুড়িয়ে ফেলা। চর্বি পোড়ানো শেষ হয়ে গেলে শরীর জমানো কার্বোহাইড্রেট পোড়ানো শুরু করে, ফলে ওজন কমে যায়।
আমাদের শরীরের প্রধান খাদ্য বা জ্বালানি হলো গ্লুকোজ। কিটো ডায়েটের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে গ্লুকোজের বদলে কিটোন বডিগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা।
কিটো ডায়েট হল সুপার লো-কার্ব ডায়েট। এই ডায়েটে কার্ব এক্সট্রিম লেভেলে কম থাকবে আর ফ্যাট অনেক হাই থাকবে আর প্রোটিন মিড লেভেলে থাকবে। টিপিক্যাল কিটোজেনিক ডায়েটে টোটাল ক্যালোরিক নিডের কার্ব ৫%, প্রোটিন ২৫% আর ফ্যাট থাকে ৭০%।
মানে আপনি সারাদিন যতটা খাবার খাবেন তার মধ্যে খাবারের পার্সেন্টেজ এমন হবে। আমাদের নরমাল ডায়েটে ৫০% কার্বোহাইড্রেট থাকে, ২০%প্রোটিন আর ৩০%ফ্যাট থাকে। ধরা যাক আপনি ১২০০ ক্যালরি খাবেন সারাদিনে। তার ৫০% কার্ব মানে আপনাকে ৬০০ক্যালরির কার্ব খেতে হবে।
কিটো ডায়েট অনেক ইফেক্টিভ ফ্যাট লস ডায়েট। কিটো ডায়েটে মেইনলি প্রোটিন খাওয়াই মূল উদ্দেশ্য। তবে শুধুমাত্র প্রোটিন থেকে ডেইলি ক্যালরি রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করা ফলে টোটাল ক্যালরি নিডের মাত্র ২০-৩০% প্রোটিন আর ৫% কার্ব বাকিটা ফ্যাট দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে হবে।
কিটো ডায়েট চার প্রকার
১. স্ট্যান্ডার্ড কিটোজনিক ডায়েট: এটাতে কার্ব ৫%, প্রোটিন ২৫ % আর ফ্যাট ৭০% থাকে।
২. সাইক্লিক্যাল কিটোজনিক ডায়েট: এই কিটো তে সপ্তাহে দুদিন হাই কার্ব খাওয়া যায়।
৩. টার্গেটেড কিটোজনিক ডায়েট: এই কিটোতে ওয়ার্ক আউটের আগে বা পরে কার্ব খেতে পাওয়া যায়।
৪. হাই প্রোটিন কিটো ডায়েট: এটা অনেকটা স্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েটের মতোই, শুধু প্রোটিন ২৫% থেকে বেড়ে ৩৫% হয়ে যায়। এটাতে ফ্যাট ৬০%, প্রোটিন ৩৫% আর ফ্যাট ৫%. বডি বিল্ডার বা এথেলেট রা এটা করে থাকে।
কিটো ডায়েট: যেসব খাবার খেতে পারবেন না
# চিনি বা মিষ্টিজাতীয় কোনো কিছু একদম বাদ। কোক, ফলের জুস, কেক, আইসক্রীম, চকলেট, স্মুদি, যেকোনো ধরনের মিষ্টি।
# আটার তৈরি কোনো কিছু, ভাত, পাস্তা, নুডলস, ওটস, কর্ন ফ্লেক্স সব বাদ।
# সব ধরনের ফল নিষেধ।
# সব ধরনের ডাল নিষেধ, ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি ভালো পরিমাণ কার্ব থাকে।
# মাটির নিচে হয় এমন সব সবজি যেমন: আলু, মুলা, গাজর, কচু সব বাদ।
# যে কোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার একদম বাদ।
কিটো ডায়েট: যেসব খাবার খাওয়া যাবে
* মাংস: গরু, মুরগি
* সব ধরনের মাছ
* ডিম
* বাটার
* বাদাম
* হেলদি ওয়েল– যেমন অলিভ ওয়েল, কোকনাট ওয়েল, ক্যানলা ওয়েল
* ঘি
* সবুজ যে কোনো সবজি, পালং, ব্রকলি, বাঁধাকপি এসব।
* মোটামুটি সবধরনের মশলা।
যে কারণে কিটো ডায়েট ভাল
# অল্প সময়ে প্রচুর ফ্যাট কমানো যায়।
# ফ্যাট আর প্রোটিন খাবেন তাই পেট খালি থাকবে না।
# শরীরে পেশীর পরিমাণ কমবে না কিন্তু মেদ কমে যাবে।
# অনেক বেশি প্রোটিন থাকাতে সহজে ক্ষুধা লাগবে না। আপনি সহজে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন।
# এক গবেষণাতে দেখা গেছে, কিটো ডায়েট করা মানুষ টিপিক্যাল লো-ফ্যাট ক্যালরি রেস্টিক্টেড ডায়েটের চেয়ে ২.২ গুণ বেশি ওজন কমিয়েছে।
# কিটো ডায়েট হার্ট ডিজিজ, ব্লাড প্রেশার, ব্লাড সুগারের রিস্ক কমায়।
# পিসিওএস রোগীদের জন্য ইফেক্টিভ ডায়েট।
# ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক ইফেক্টিভ একটা ডায়েট, শুধু ওজন কমানো না ব্লাড সুগার আর ইনসুলিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভেজিটেরিয়ানদের জন্য কিটো ডায়েট বেশ কষ্টকর ব্যাপার হবে। কারণ, কিটো ডায়েটে প্রোটিন খুব কম পরিমাণে গ্রহণ করতে হলেও শাক-সবজি থেকে সেই প্রোটিন পাওয়াটা খুব কঠিন ব্যাপার। এছাড়া, সবজিতে প্রোটিনের সঙ্গে সঙ্গে শর্করাও থাকে যা ডায়েটে বিঘ্ন তৈরি করতে পারে।
কিটো ডায়েট মানেই প্রচুর পরিমাণ মাংস গ্রহণ এমন নয়। কিটো ডায়েটের ক্ষেত্রে ক্যালোরির উৎসকে মোট তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। ৭৫ শতাংশ ফ্যাট, ২০ শতাংশ প্রোটিন এবং ৫ শতাংশ কার্ব- মোট মিলিয়ে এভাবেই কিটো ডায়েট সাজানো হয়।
Leave a reply