পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কাউয়ারচর এলাকায় মাছের ঘের দখল করতে গিয়ে মালিকের তিনপুত্রকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। মামলা হলেও এখনও গ্রেফতার হয়নি মূল আসামি, স্থানীয় এমপির পিএ তরিকুল ইসলাম। তরিকুলসহ আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ঘের মালিক মাহাবুবুর রহমান।
শনিবার বেলা ১১টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ধুলাসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মাহাবুবুর রহমান লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
লিখিত বক্তব্যে মাহাবুবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে কাউয়ার চরে তার মাছের ঘেরে এমপি মহিব্বুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা চালায়। কুপিয়ে জখম করা হয় তার বড় ছেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা নুর বাহাদুরসহ অপর দুই ছেলে জুয়েল ও সোহেলকে। আহত হয়েছেন তার ভাই হেলালও। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার সময় ফের হামলা করা হয়। এসময় তিনি নিজেও মারধরের শিকার হন।
স্থানীয় এমপি মহিব্বুরের পিএ তরিকুলের নেতৃত্ব ‘জামায়াত শিবিরের কায়দায়’ হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রামদা, চাপাতি, রড, লাঠিসহ দেশিয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় আমার সন্তানদের হত্যার উদ্দেশে ঝাপিয়ে পড়ে তারা। প্রথমেই তরিকুল তার হাতের রাম দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। রামদার আঘাতে নূর বাহাদুরের বাম হাতের কব্জি গভীরভাবে কেটে যায়। রগ কেটে যাওয়ায় তার জীবনশঙ্কা দেখা দেয়। কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসকরা প্রথমে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। জীবনশঙ্কা দেখা দেওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে তার সফল ভাস্কুলার সার্জারি হয়েছে। ১৪ দিন পর আবার তার হাতে সার্জারি করতে হবে। হামলার সময় খুব কাছ থেকে ভারি কোনো কিছু দিয়ে তার বাম চোখে আঘাত করা হয়। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে তার চোখের চিকিৎসা চলছে।
এ ঘটনায় মহিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ শাহিন নামের এক আসামিকে গ্রেফতার করে। কিন্তু মামলার প্রধান আসামি তরিকুলসহ অন্যান্যরা প্রকাশ্যে ঘুরছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা জানান, আসামিরা নানা মাধ্যমে ভয়-ভীতি ও চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমিসহ আমার সন্তানরা চারদলীয় জোট সরকারের সময় সকল নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করে আওয়ামী লীগ করেছি। কিন্তু এখন আমার দল ক্ষমতায় থাকলেও গোটা পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। উপার্জন বন্ধের শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের এই নেতা। তিনি বলেন, এ যেন তৃণমূলের আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র। এ সময় মাহাবুবুর রহমানের ছোট ভাই মসিউর রহমানসহ তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলারসর ইউনিয়নের কাউয়ারচরে মাছের ঘের দখল করতে গিয়ে ঘের মালিকের তিন পুত্রকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ হামলায় পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মহিববুর রহমানের পিএ তরিকুলে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে আহত হয় ঘের মালিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুর রহমানের তিন পুত্র নুর বাহাদুর, সোহেল ও জুয়েল।
গুরুতর আহত নুর বাহাদুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু সচল করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তাদের আন্দোলন ও রিটের সূত্র ধরে দীর্ঘ প্রায় ২৯ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তৈরি হওয়া গণজাগরণ মঞ্চ ও এক-এগারো পরবর্তী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন নুর বাহাদুর। বর্তমানে কৃষক লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন তিনি।
Leave a reply