সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রেকর্ড ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। রোববার জিম্বাবুয়েকে ১৬৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। এর আগে ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা।
রোববার টাইগারদের ছুঁড়ে দেয়া ৩২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বোলিং তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই জিম্বাবুয়ের ওপেনার টিনেশে কামুনহুকউইয়ের উইকেট তুলে নেন সাইফ। তার বলে অসহায়ের মতো বোল্ড হয়ে ফেরেন জিম্বাবুয়ের এ ওপেনার। ১.৪ ওভারে ১ রানে প্রথম উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
দলীয় ২৩ রানে সাইফউদ্দিনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন রেগিস চাকাভা। এরপর ওপেনিংয়ে ব্যাটিংয়ে নামা জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক চামু চিবাভাকে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। চিবাভার বিদায়ে ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় জিম্বাবুয়ে।
ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে দলের হাল ধরতে পারেননি জিম্বাবুয়ের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেলর। ইনিংসের ১৪-তম আর নিজের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক টেলরের উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম। ৪৪ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে সম্মানজনক স্কোরের দিকে নেয়ার চেষ্টা করেন মাধেভেরে আর সিকান্দার রাজা। কিন্তু ২৩-তম ওভারে রাজাকে মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দি করেন মোস্তাফিজ। দুই ওভার পরই একমাত্র প্রতিরোধ গড়া মাধেভেরেকেও তুলে নেন মিরাজ। তাকে তালুবন্দি করেন মাশরাফী।
এরপর ২২ রানের জুটি গড়ে রান আউটের শিকার হন রিচমন্ড মুতুম্বামি। ১৪ বলে ১৭ রান করা মুতুম্বামি দুটি বিশাল ছয় হাকিয়েছেন। আর ৩ রান যোগ করতেই ধরে খেলার চেষ্টা করা তিরিপানোও মিরাজের বলেই ফিরতি ক্যাচ দেন।
এরপর জিম্বাবুয়ের শুধুই সময় ক্ষেপনের চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত ১৫২ রানেই গুটিয়ে যায় তারা। শেষ দুটি উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন ও মাশরাফী। উইকেট খরায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক এদিন ৬.১ ওভার বল করে ৩৫ রানে ২ উইকেট শিকার করেছেন। টাইগার শিবিরের সবচেয়ে সফল বোলার সাইফউদ্দিন ৭ ওভারে মাত্র ২২ রানে নিয়েছে ৩ উইকেট। এছাড়া মেহেদী মিরাজ ২টি এবং তাইজুল ও মোস্তাফিজ ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে, টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সিলেটের মাঠে দারুণ এক সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন ওপেনার লিটন দাস। আর কার্যকর ফিফটি তুলে নিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। তাতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩২১ রান করেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটিই টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
ওপেন করতে নেমে শুরু থেকেই ছন্দে ছিলেন লিটন। অপর ওপেনার তামিম স্ট্রাগল করলেও শুরু থেকেই রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তিনি। দলীয় ৬০ রানে তামিম (৪৩ বলে ২৪) ফিরে যান। যাওয়ার সময় অহেতুক রিভিউ নিয়ে সেটি নষ্ট করেন। যেটিকে ইএসপিএন ক্রিকইনফো বলছে ‘নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়’। কেনো তামিম নিশ্চিত আউট জেনেও রিভিউ নষ্ট করলেন সেটি নিয়ে তখন বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন তাদের ধারাভাষ্যকার। মন্তব্য করেছিলেন, ‘তামিম আর ইউ কিডিং মি? ইউ সাকসেসফুলি ওয়েস্টেড অ্যা ক্রুসিয়াল রিভিউ। দ্যাট ওয়াজ নট নেসেসারি। লার্ন টু লেট গো, ডিউড।’
তামিমের ভুলের খেসারত দিতে হলো ওয়ান ডাউনে নামা শান্তকে। লিটনের সাথে ৮০ রানের জুটি গড়েন ছন্দে থাকা শান্ত। ম্যাচের ২৫.৪-তম ওভারে দলীয় ১৪০ রানে টিনোটেন্ডা মুতুম্বোডজির বলে দুর্ভাগ্যজনক এলবিডব্লিউ দেয়া হয় তাকে। খালি চোখেই দেখা যাচ্ছিল বল অফ স্ট্যাম্প মিস করতে যাচ্ছে। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, ইম্প্যাক্ট ছিল স্টাম্পের বাইরে। বলটি কোনোভাবেই স্টাম্পে লাগছিল না। রিভিউ নিলেই বেঁচে যেতেন শান্ত। কিন্তু সে সুযোগ যে আর নেই! রিভিউর কোটা নষ্ট করে গেছেন তামিম। ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দিলেন শান্ত। টিভি ধারাভাষ্যকারদের মতো আফসোস দেখা গেলো ক্রিকইনফো ধারাভাষ্যকারদের মাঝেও। একে ‘দুঃখজনক’ বলে তামিমের অহেতুক রিভিউ নষ্ট করার প্রসঙ্গ টানলেন তারা। আফসোস করলেন কেনো রিভিউ নষ্ট করলো তামিম।
আউট হওয়ার আগের বলেও দৃষ্টিনন্দন চার হাকিয়েছিলেন শান্ত। এর আগে, মেরেছেন দুটি দারুণ ছয়। ৩৮ বলে ২৯ রান করে দুঃখজনক আউট হয়ে ফিরে গেলেন তিনি।
এরপর, মুশফিকের সাথে ৪২ রানের জুটি গড়েন লিটন। মুশফিক উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে মাহমুদউল্লাহর সাথে জুটিতে দ্রুতই ২৪ রান তুলে নিয়েছিলেন লিটন। ম্যাচের ৩৪-তম ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাকিয়ে তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। ৯৫ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর যেন আরও আগ্রাসী লিটন। মাঠজুড়ে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটান।
ডোনাল্ড টিরিপানোর ওভারে ৩ বাউন্ডারি হাকানোর পরের ওভারে ওয়েসলি মাদেভেরের বলে হাকালেন বিশাল ছয়। বলা যায়, জোরালো স্লগ সুইপে ছয় আদায় করে নিলেন লিটন। সে সময় আবার পায়ের মাংসপেশিতে টান খেলেন। এতে মাঠ থেকেই উঠে যেতে হলো লিটনকে। তার বদলে মাঠে নামেন মোহাম্মদ মিথুন।
মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার আগে লিটনের ১০৫ বলে ১২৬ রানের ইনিংসে ছিল ১৩টি চার ও দুটি বিশাল ছয়। বাংলাদেশের ইনিংসের ভিত তিনিই দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন।
লিটনের বিদায়ের পর ৬৮ দারুণ এক জুটি গড়ে রানের ধারা অব্যাহত রাখেন মাহমুদল্লাহ ও মিথুন। ২৮ বলে ৩২ করে রিয়াদ ফিরে গেলেও ৪১-বলে ঠিকই ফিফটি তুলে নেন মিথুন। অবশ্য এরপর আর ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। শেষ দিকে সাইফউদ্দিনের ১৫ বলে ২৮ রানের ক্যামিও-তে ৩২১ রানের বড় সংগ্রহ করে টাইগাররা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। পোফুর করা ৫০-তম ওভারের ৬ বলে তুলে সাইফউদ্দিন নেন ২২ রান। অপরপ্রান্তে কোনো বল না খেলে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা।
সবকিছুই তো হলো, কিন্তু ম্যাচ সেরা কে? লিটনের ইনিংসটা দেখলে কারো আর সংশয় থাকার কথা নয়।
Leave a reply