গতকালও যে ঘরে রাত কাটিয়েছেন সেই ঘরটা আজ পুড়ে ছাই। শেষ সম্বলটুকু রক্ষায় আগুন নেভাতে দিনভর পরিশ্রম করেছেন রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর বস্তির বাস্তুহারা এই মানুষগুলো। তবে রাতটা কেমন গেলো এই বস্তিবাসীর? গৃহহীন এই মানুষগুলো এই ধাক্কা কতটা সামলে উঠেছেন?
ঘর হারানো আঙ্গুর বেগমকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনার ঘর কই ছিলো? হাত দিয়ে দেখিয়ে বললেন ‘ওই যে ওইখানটায়’। রাতের বেলা কেন আসছেন জানতে চাইলে বললেন, ১০ বছর এখানে ছিলাম। সব তো শেষ হয়ে গেলো। কষ্ট লাগে, মায়া লাগে খুব। উল্লেখ্য, চার সন্তানসহ এখানেই ছিলো আঙ্গুরের আবাস। বছর দশেকের ঠিকানা, এক বেলায়ই সব পুড়ে ছাই।
কাছের একটি স্কুল মাঠে আর আশপাশের বিভিন্ন ভবনের নিচে আপাতত মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছে তাদের। তবে সেখান থেকে ঘুরে ফিরে বারবার আসছেন পুরনো সেই ঘরের কাছে। কেন আসছেন? কী আছে এই ছাই-ভষ্মে?
এদিকে প্রায় ৩৫ বছরের মায়া কাটিয়ে উঠতে পারছেন না বলে জানালেন সুরুজ মিয়া। ছলছল চোখে অপলক দেখছিলেন পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ঘরটি। পাশের স্কুলের বারান্দায় আজকের মত মাথা গোজার ঠাঁই মিললেও ঘুমের দেখা পাচ্ছেন না সুরুজ। চিন্তা এখন তিন সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবেন?
বুধবার দিনের শুরু আর শেষের মধ্যে অনেক ফারাক এই বস্তির মানুষগুলোর। সকালের আগুনের তান্ডবলীলা দেখার পরেও বারবার ছুটে যাচ্ছেন ভষ্মীভূত ঘর আর আসবাবের কাছে। পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছেন অভাগা এই মানুষগুলো।
তবে কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য? পুনর্বাসন নাকি স্থায়ী উচ্ছেদ। সেই দোলাচলের মধ্যে রাতটা কেটেছে এই মানুষগুলোর। কোনো একটা ঠিকানা পাবার আগে আপাতত ভাসমান জীবনই সম্বল তাদের।
উল্লেখ্য, বুধবার (১১ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সকাল পৌনে ১০টার দিকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে এ ঘটনায় হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট।
Leave a reply