আরডিসি বলছিলেন কালেমা পড়, তোকে এনকাউন্টার দেবো: সাংবাদিক আরিফুল

|

শুক্রবার মধ্যরাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও গ্রেফতার করা হয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আনসার সদস্য মিলিয়ে ৪০ জনের দল যখন বাসায় প্রবেশ করে তখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানান ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফুল। তিনি জানান, তাকে বারবার এনকাউন্টার দেয়ার কথা বলছিলেন আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার, রাজস্ব)।

রোববার জামিনে মুক্ত হবার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের চালানো অকথ্য নির্যাতনের বর্ণনা দেন আরিফুল।

আরিফুল জানান, শুক্রবার রাত ১২টায় ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়ার সময় হঠাৎ করেই দরজা ধাক্কানোর শব্দ শুনতে পান আরিফুল। তখন পরিচয় জানতে চাইলে ওপাশ থেকে বলা হয় ‌’থানা থেকে আসছি’। এসময় আরিফুল সদর থানাও ওসিকে ফোন দিলে ওসি থানা থেকে তার বাসায় কাউকে পাঠানো হয়নি বলে জানায়।

ফোন দেয়ার কথা শুনে দরজার বাহিরে থাকা আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার, রাজস্ব) নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল লোক দরজা ভেঙে বাসায় ঢোকে। এ সময় তাদের সাথে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমাও ছিলেন। ঘরে ঢুকেই আরডিসি নিজাম উদ্দিন আমার মাথায় কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। তবে রিন্টু চাকমা কোনো আঘাত করেননি।

আরিফুল বলেন, মধ্যরাতে আমার বাড়ির দরজা ভেঙে আমার ওপর প্রথম আঘাত করেন আরডিসি। উনি আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন, এরপর আমাকে টেনেহিচঁড়ে নিয়ে আসেন। মাইক্রোতে নেয়ার সময় আমাকে হাত এবং চোখ বেঁধে ফেলেন। এবং এনকাউন্টার দেয়া হবে বলে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে এনকাউন্টার দিতে চান। আমি অনেক আকুতি-মিনতি করি, আমার সন্তানদের কথা বলে প্রাণভিক্ষা চাই, এরপরও তারা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না; আমাকে বারবার বলছিলেন কলেমা পড়ে নে, কলেমা পড়ে নে। আরডিসি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিলেন। এরপর কোনো এক জায়গা থেকে ঘুরিয়ে আমাকে আবার ডিসি অফিসের মোড়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

সেখানে সুযোগ পেয়ে চোখের বাধন আলগা করেন জানিয়ে আরিফুল বলেন, বুঝতে পেরেছি যে এটা ডিসি অফিস। এরপর আমাকে একটা রুমে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নির্যাতন করা হয়। আরডিসি নিজেই আমাকে মারধর করেছেন। আমাকে বিবস্ত্র করে আমার ভিডিও ধারণ করা হয়। আমার কাছ থেকে ৪টি স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে চোখ বাঁধা অবস্থায়। সে কী জন্য আমি জানি না। এরপর তাড়াহুড়ো করে আমাকে কারাগারে রেখে আসেন।

জামিন আবেদনের বিষয়ে কিছু জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে আসার আগে আমার সাথে যা কিছু হয়ে সব আমার অমতে হয়েছে, জোরপূর্বক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মাদকবিরোধী অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি টাস্কফোর্সের। তবে এ ঘটনার পর আরিফুলের স্ত্রী দাবি করেন, পুরো ঘটনাই সাজানো। দরজা ভেঙে আরিফুলকে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনায় দেশজুড়ে চ্যাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে, আরিফুলের জামিন হয়েছে। জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। ডিসিসহ প্রশাসনের ৪ কর্মকর্তার গাফলতির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply