লেখক হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় খাতা কলম নিয়ে চা-কফি গলায় ঢেলে একটার পর একটা সিগারেট-গাঁজা ফুঁকে যুতসই একটা শব্দ লিখতে না পেরে বসে বসে মাথার চুল ছেঁড়েন, এমন লোকের সংখ্যাও নেহায়েৎ কম নয়।
পৃথিবীর অনেক দেশে রয়েছে কবিতা লেখার কোর্স। এমনকি বিশ্বের অনেক বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়েও নানা ধরনের কোর্স চালু আছে সাহিত্যিক হওয়ার জন্য। খোদ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত অমন একখান কোর্স করেছিলেন।
টিপসগুলো বলা নিয়ে আর গড়িমসি না করে বরং বলেই ফেলি। তবে এ সব টিপস বানানো কোনো গল্প নয়, স্বয়ং বিখ্যাত সব লেখক এ সব অনুসরণ করেছেন। তারা ফল পেয়েছন, আপনি পাবেন না এমনতো কোনো কোথাও বলা হয়নি বা লেখা হয়নি। তো আর দেরি না করে, দেখে নেই বিখ্যাত সব লেখকদের লেখনীর পেছনের অদ্ভুত কাণ্ড-কীর্তি।
বিশ্ব বিখ্যাত রুশ লেখক লিও টলস্টয়ের মতে, আমি সব সময় সকালে লিখি। পরে আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, রুশোও ঠিক একই কাজ করে। সকালে সাধারণত যে কারও মন মেজাজই ঝরঝরে থাকে। সবচেয়ে ফলপ্রসূ ভাবনাটা বেশিরভাগ সময় সকালেই আসে।
নিউ জিল্যান্ডে বড় হওয়া ইংরেজি ভাষার ছোট গল্প লেখিকা ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ডের মতে, অতীতে তাকিয়ে আমি ভাবি, আমি সবসময় লিখছি। যদিও অর্থহীন কথাবার্তা, কিন্তু কিছু না লেখার থেকে অর্থহীন কথাবার্তা লেখাও অনেক ভালো।
নোবেল ও পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত আমেরিকান লেখক উইলিয়াম ফকনার কি বলেছেন, নিজেই তা পড়ুন:
পড়ুন, পড়ুন, এবং সবকিছু পড়ুন-বাজে, ধ্রুপদী, ভালো, মন্দ, এবং কীভাবে লেখা হয়েছে তা দেখুন। ঠিক একজন ছুতোরের মতো; যে শিক্ষানবিশের কাজ করে, এবং গুরুর কাজকে অধ্যয়ন করে। পড়ুন! তবেই আপনি অনুধাবন করবেন। তারপর লিখুন। লেখা ভালো হলে আপনি নিজেই বুঝবেন। আর না হলে, জানালা দিয়ে ফেলে দিন।
ম্যান বুকার পুরস্কার বিজয়ী ইংরেজ লেখিকা হিলারি ম্যানটেলের মতে, লেখকের জন্য সবচেয়ে উপকারী স্বভাব হচ্ছে আত্মপ্রত্যয় তথা আত্মতুষ্টি লালন করা-যদি সামাল দিতে পারেন। আপনি নিজেকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চান, এবং সেজন্য আপনার কাজ সম্পর্কে আপনারই আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে; এমনকি যখন কেউই আপনার সাথে একমত হবে না তখনও।
হেমিংওয়ের পরামর্শ শুনতে একটু অদ্ভুত ঠেকতে পারে, কিন্তু কি আর করবেন; অমন একজন লেখকের কথা তো আর ফেলে তো দিতে পারবেন না।
গল্পটা ভালো মতো এগোতে থাকলে থামুন, এবং এ নিয়ে পরের দিন লেখা শুরুর আগে ভাববেন না। এতে আপনার অবচেতন মন সব সময় লেখাটি নিয়ে ভাববে। কিন্তু আপনি যদি সচেতনভাবে লেখাটি নিয়ে ভাবেন, অথবা দুঃশ্চিন্তা করেন; তবে ওটা মরে যাবে, এবং লেখার আগেই আপনার মাথা ক্লান্ত হয়ে পড়বে।
বেশ কয়েকজন সাহিত্যিকের পর এবার একজন চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র পরিচালককে ধরা যাক।
আমেরিকার লেখিকা মিরান্ডা জুলাইয়ের মতে, প্রথম উপন্যাস লিখার সময় নিজেকে সবচেয়ে বাজে লেখক মনে হত। তখন মনে হয়নি, আমি প্রথম খসড়া লিখছি। কিন্তু প্রথম খসড়া লেখার পর বাকি সবকিছু তুলনামূলকভাবে সহজ।
ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্প লেখিকা জাডি স্মিথের মতে, ইন্টারনেট সংযোগ নেই, এমন কম্পিউটারে বসে আপনাকে লিখতে হবে।
যে গল্প আপনি কখনও শেষ করবেন না, তা বাদ দিন। বরং চারশত পাতা নিন এবং প্রতিদিন একপাতা করে লিখুন।
লেখক হওয়ার পরামর্শ দিতে গিয়ে এমনটিই বললেন নোবেল ও পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান সাহিত্যিক জন স্টেইনব্যাকের।
বিশ্ব শতকের একজন সেরা আমেরিকান লেখক এফ স্কট ফিটজেরাল্ড, যার লেখনিতে জ্যাজ সংগীতের শুরুর দিককার আমেজ পাওয়া যায়। তার মতে লিখতে হলে:
এটা খুবই পরিস্কার বিষয় যে, বড় কিছু মদ পানরত অবস্থায় লেখা যাবে না। ছোট গল্প লেখা গেলেও উপন্যাসের জন্য আপনাকে নিরন্তর মাথা খাটাতে হবে এবং এ জন্য অবশ্যই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
হেমিংওয়ের পরামর্শ যদি অদ্ভুত লেগে থাকে তবে মুরিয়েল স্পার্কের কথায় আপনি নিশ্চতভাবে ভিরমি খাবেন, কিংবা কিঞ্চিত ভয়ও লাগতে পারে। স্কটিশ ঔপন্যাসিক, ছোট গল্প লেখক, কবি ও প্রাবন্ধিক মুরিয়েলের মতে লেখক হতে হলে নাকি বিড়াল পুষতে হবে। আর তাতেই নাকি কলম দিয়ে ঝরঝর করে লেখা বেরোতে থাকবে।
লিখতে হলে বিড়াল পুষতে হবে। একটি ঘরে বিড়ালের সাথে একা…… বিড়ালটি লেখার টেবিলে উঠে টেবিলে রাখা বাতির নিচে বসবে। বাতির আলো বিড়ালকে বেশ তুষ্ট করে। বিড়াল তখন প্রশান্ত হবে; এ প্রশান্তি দেবে অনুধাবন সক্ষমতা। বিড়ালের এ প্রশান্তি আপনাকে ধীরে ধীরে আবেশিত করবে; আপনি ফিরে পাবেন আত্ননিয়ন্ত্রণ। আপনাকে শুধু সব সময় বিড়ালটির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। মনোযোগের ওপর বিড়ালের প্রভাব চমকপ্রদ, এবং রহস্যময়।
যমুনা অনলাইন: এফএইচ/টিএফ
Leave a reply