করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। গত ১০ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজারমূলধন কমেছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে মূল্যসূচক কমেছে ৮৬১ পয়েন্ট। বুধবার একদিনে কমেছে ১১ হাজার কোটি টাকা। একই অবস্থা অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। সবার মধ্যে আতঙ্ক থাকায় ৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে চলে এসেছে শেয়ারবাজার। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের সীমা ১ ঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ পতন স্বাভাবিক নয়; এর পেছনে অন্য কেউ জড়িত থাকতে পারে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় হয়েছে। এর কারণ হিসেবে একেকজন একেক ধরনের কথা বলছেন। কেউ বলছেন, করোনাভাইরাস আতঙ্ক। কেউ বলছেন, অর্থনীতি খারাপ। তবে আমার বক্তব্য পরিষ্কার। আর তা হল- এ ধরনের দরপতনের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এ পতনের পেছনে কারা জড়িত সেটি খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কী করছে, তা তদন্ত করা উচিত। তিনি বলেন, মধ্য মেয়াদে বাজার উন্নয়নে সুশাসন ও ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এগুলো সময়ের ব্যাপার। বাজারে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। তার মানে এই নয় যে, হঠাৎ করে এ ধরনের পতন হবে।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে দরপতন ছিল। এরপর গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত তিন রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এতে দরপতন আরও তরান্বিত হয়। আর গত ১০ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজারমূলধন ৩ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে বাজারমূলধন ৫৪ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এছাড়াও ডিএসইর ব্রডসূচক এ সময়ে ৮৬১ পয়েন্ট কমেছে। একক দিন হিসেবে বুধবার ডিএসইতে ৩৫৬টি কোম্পানির ১৭ কোটি ৮৪ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে; যার মোট মূল্য ৪২৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩টি কোম্পানির, কমেছে ৩৩৩টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসইর ব্রডসূচক আগের দিনের চেয়ে ১৬৮ পয়েন্ট কমে ৩ হাজার ৬০৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এটি সাত বছরের মধ্যে সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে ২০১৩ সালের ১০ মে ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৩ হাজার ৫৫৯ পয়েন্ট। সাধারণত বাজারের উত্থান-পতন মূল্যসূচক দিয়ে বোঝা যায়। বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লে সূচকের উত্থান আর কমলে পতন হয়। বাজার সংশ্লিষ্টদের এ ধারণা ছিল বড় বিপর্যয় না এলে সূচক কোনোভাবেই ৪ হাজার পয়েন্টের নিতে আসবে না। এসব কারণেই এ ৪ হাজার পয়েন্টকে মনস্তাত্ত্বিক লেবেল বলা হতো। কিন্তু ইতিমধ্যে ওই লেভেল ভেঙেছে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য আতঙ্কের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ের পতনের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জড়িত। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান আগে বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিয়েছিল, তারাই পতনের জন্য দায়ী। কারণ তারা করোনা আতঙ্কে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফোসর্ড সেল (বাধ্যতামূলক শেয়ার বিক্রি) দিচ্ছে। নিয়ম অনুসারে একজন বিনিয়োগকারী ১০০ টাকা থাকলে মার্চেন্ট ব্যাংক বা ব্রোকারেজ হাউস শেয়ার কেনার জন্য তাদের সর্বোচ্চ আরও ৫০ টাকা ঋণ দিতে পারে। শেয়ারবাজারের পরিভাষায় একে মার্জিন ঋণ বলে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসারে এই মার্জিন ঋণের অনুপাত ১:০.৫। কিন্তু বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান এ সীমা মানেনি। তারা ১০০ টাকার বিপরীতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। আর বর্তমানে শেয়ারের দাম কমছে। আরও কমতে পারে এ আশঙ্কায় প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফোসর্ড সেল করে দিচ্ছে। এতে বাজারে লাগামহীন পতন হচ্ছে।
Leave a reply