করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে ২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৭ জনই একই পরিবারের। এরা মাদারীপুরের শিবচরের একজন ইতালি ফেরত প্রবাসীর পরিবারের সদস্য। আক্রান্তদের মধ্যে এই পরিবারে শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়স্বজনও রয়েছেন।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে কীভাবে একজন থেকে এতগুলো মানুষ সংক্রমিত হলেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে বিদেশ ফেরতদের জন্য স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশ লঙ্ঘন করে অসতর্ক চলাফেরা ও আচরণের মাধ্যমে ওই ব্যক্তি এতগুলো মানুষকে সংক্রমিত করেছেন।
একটি পরিবারের সংক্রমণ চিহ্নিত হবার পরেই সরকারিভাবে শিবচরকে লকডাউন করবার সিদ্ধান্ত হয়।
শিবচরে এই সংক্রমণের শুরু হয় দু’জন ইতালিফেরত প্রবাসীর মাধ্যমে। এরা দু’জন মূলত বন্ধু। প্রথমেই এদের দু’জনকে কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পরে এদের আত্মীয়স্বজনকে পরীক্ষা করে দেখা যায়- একজনের বাবা, স্ত্রী, দুই সন্তান, শ্বাশুড়ি এবং শ্যালকের স্ত্রীও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। শ্বাশুড়ি, শ্যালকের স্ত্রী এবং ইতালিফেরত একজন এখন মাদারীপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আর বাকী পাঁচজন- অর্থাৎ ইতালিফেরত অন্য প্রবাসী, তার বাবা, স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে আসা হয়েছে ঢাকায়। শুরু থেকেই সরকারিভাবে বলা হয়ে আসছে, যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদের স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে। কিন্তু এই নির্দেশ কার্যকর করাটাই সবচেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বিবিসিরই একাধিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কীভাবে বিদেশফেরতরা বাংলাদেশে এসে অসচেতন এবং অসতর্কভাবে ঘোরাফেরা করেছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক জনসমাগমে হাজির থেকেছেন।
উল্লেখ্য, এক শিবচরেই চলতি মাসে প্রায় সাতশ প্রবাসী ফিরেছেন। যে কর্মকর্তা বিবিসিকে শিবচরের এই সংক্রমণের তথ্য দিয়েছেন- তিনি বলছিলেন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষজনকে ঘরে আটকে রাখাটাই তাদের জন্য সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি সোমবারেরই একটি উদাহরণ দিয়ে বলছিলেন, এক বাড়িতে গিয়েছি, সে বাড়ির সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। সবার ঘরের ভেতরে থাকার কথা। কিন্তু ঢুকে দেখি সেখান থেকে একজন ফেরিওয়ালা বের হচ্ছেন। বাড়ির সবাই এই ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কেনাকাটা করছেন।
যে ব্যক্তিটি ছয়জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছেন তার সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, তিনি গত ৭ই মার্চ বাংলাদেশে ফেরেন। এর একদিন পরেই বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়ার খবর প্রকাশ হয়।
এই খবর প্রকাশ হবার পর সারা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেই এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়। কিন্তু ইতালিফেরত ওই ব্যক্তি তার বাড়ির এবং শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়দের সাথে মেলামেশা অব্যহত রাখেন।
১১ই মার্চ ওই ব্যক্তিটির শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গ দেখা দিলে তিনি মাদারীপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকায় আসেন। ঢাকাতেই পরীক্ষায় তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে ধরা পড়েন। সাথে সাথেই ঢাকা থেকে প্রতিনিধিদল শিবচরে যায় এবং তার পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টাইন করে। ধীরে ধীরে পরিবারের বাকী সদস্যদের মধ্যেও উপসর্গ দেখা দেয়।
Leave a reply