নিত্যপণ্য বিক্রি চড়া দামে

|

করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটির তৃতীয় দিন শনিবারও রাজধানীর বাজারগুলো ছিল প্রায় ক্রেতাশূন্য। আবার ক্রেতা না থাকায় অধিকাংশ দোকান ছিল বন্ধ। আর এ সুযোগে দোকানদাররা ‘সিন্ডিকেট’ করে অহেতুক দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন পণ্যের। এর মধ্যে সরবরাহে ঘাটতি না থাকলেও গত ২ সপ্তাহ আগে বেড়ে যাওয়া চালের দাম এখনও বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে।

পাশাপাশি গত ক’দিন ধরেই অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন সবজি। আর এক মাস আগে করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পর গরু ও খাসির মাংসের দাম যে বাড়ানো হয়েছিল, সেটি এখনও অব্যাহত আছে। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মসুর ডাল, খোলা ময়দা, হলুদ ও ছোলার দাম। সব মিলিয়ে অতি প্রয়োজনে কেনাকাটা করতে আসা ভোক্তারা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে চড়া দামেই বিভিন্ন নিত্যপণ্য কিনে বাড়ি ফিরছেন তারা।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সরেজমিন দেখা গেছে, দুপুর ১২টা, রাজধানীর কারওয়ানবাজারে মিনিকেট চাল কিনতে এসেছেন মো. রফিকুল ইসলাম। বাজারের এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন, কিন্তু কোনো দোকানে কম দামে চাল পাচ্ছেন না। জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ বাজারের যে ক’টি চালের দোকান খুলেছে সবাই সিন্ডিকেট করে বসে আছে। সব দোকানে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এক টাকাও কমে বিক্রি করবে না। বিক্রেতারা বলছে নিলে নেন, না নিলে চলে যান। এমন হলে কিভাবে চলবে। মনিটরিং সদস্যদের এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে।

বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা। যা ২ সপ্তাহ আগে একই দামে বিক্রি হয়েছে। নাজিরশাল বিক্রি হয়ে ৬৪-৬৮ টাকা। যা ২ সপ্তাহ আগে একই দাম ছিল। এছাড়া বাজারে বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা কেজি। যা ২ সপ্তাহ ধরে একই দামে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের চাল বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন বলেন, চালের একটু সংকট আছে। এছাড়া মিল মালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হয়েছে। যে কারণে চালের দাম একটু বাড়তি। তবে সরবরাহ বাড়তে থাকলে চালের দাম আবার কমে আসবে।

সরেজমিন রাজধানীর বাজারে চালের কোনো সংকট দেখা যায়নি। প্রতিটি দোকানেই থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চালের বস্তা। বাজারগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি না থাকলেও বিক্রেতারা এক হয়ে সব ধরনের চাল বিক্রি করছে চড়া দামে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে মাঠে আছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিশেষ মনিটরিং সেল। অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মণ্ডলের নেতৃত্বে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার তদারকি করা হয়েছে।

এ সময় কল্যাণপুরের নতুন বাজারে অভিযান চালিয়ে দুটি অপরাধে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ১৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জানতে চাইলে মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, অনেক বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। এছাড়া ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতারা অধিকাংশ দোকান বন্ধ রেখেছে। তবে যে ক’টি দোকান খোলা আছে, সেখানে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে তদারকি জোরদার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অভিযানকালে রাজধানীর কল্যানপুরের নতুন বাজারে পণ্যের মূল্য তালিকা না টাঙানো ও মূল্য তালিকার চেয়ে অধিক মূল্যে চাল বিক্রি করায় ৪টি প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। ভোক্তার স্বার্থে এ অভিযান চলমান থাকবে। এছাড়া ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতেও আমরা অভিযান পরিচালনা করব।

এ দিন বাজারে করলা বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে, যা গত ৩ দিন আগে ছিল ৪০ টাকা। প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা, গত ৩ দিন আগে ছিল ২০-২৫ টাকা। ১০-১৫ টাকা বেড়ে প্রতিটি লাউ আকার ভেদে বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। এছাড়া কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩৫ টাকা।

প্রতিপিস ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪৫-৫০ টাকা। মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মসুর ডাল (বড় দানা) বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। যা ১ সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৬০ টাকা। দেশি প্রতিকেজি হলুদ বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৮০ টাকা। যা ১ সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৬০ টাকা। ছোলা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা কেজি। যা ১ সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪৫ টাকা, দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা।

অন্যদিকে বাজারের মাংসের দোকানে দিয়ে দেখা গেছে, প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫৭০-৬০০ টাকা। যা ১ মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৪০-৫৫০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা কেজি। যা ১ মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply