করোনাভাইরাসকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ‘সবচেয়ে বড় সংকট’ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই মহামারী মানবসমাজকে ধাক্কা দিয়েছে চরমভাবে, মানুষের জীবন-জীবিকাও কেড়ে নিচ্ছে।
ইতিমধ্যে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে করোনাভাইরাসে। আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে প্রতিদিন।
করোনায় মৃত্যুবরণকারীর দাফন-শেষকৃত্যও বেশ জটিল বিষয়। সংক্রমণের ভয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন-জানাজা কিংবা শেষকৃত্যে অংশ নিচ্ছেন না স্বজনরাও।
মানুষের একটি সাধারণ ধারণা হচ্ছে- মৃত ব্যক্তির শরীর থেকেও করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই ধারণার কোনো প্রমাণ আজও মেলেনি।
কারণ মহামারীতে মারা যাওয়ার পর মানুষের শরীরে ওই এজেন্টের বেশিরভাগই দীর্ঘ সময় জীবিত থাকে না। তবে লাশের সঙ্গে সংস্পর্শ অব্যাহত রাখলে (কনস্ট্যান্টলি ইন কনকাক্ট উইথ করপসেস) যক্ষ্মা বা রক্তবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
লাশ থেকে এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত কিছু ঝুঁকি থাকে। যেমন কেউ যদি কলেরা বা রক্তপ্রদাহজনিত জ্বরে (হেমোরেজিক ফিভার) মারা যান, তা হলে এটি ঘটতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার সবশেষ রিপোর্টে বলেছে, মারা যাওয়ার পর মানুষের শরীরে জীবাণুর বেশিরভাগই দীর্ঘ সময় জীবিত থাকে না।
থাইল্যান্ডের মেডিকেল সার্ভিসের মহাপরিচালক স্যামসাক আকাসিলিফ বিষয়টি আরও খোলাসা করে বলেছেন। তিনি ব্যাংকক পোস্টকে বলেন, কোনো ব্যক্তি ভাইরাসে মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবাণুও মরে যায়। তাই অন্য ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণের সুযোগ কম।
মৃত ব্যক্তির দেহে ভাইরাসের দীর্ঘ সময় জীবিত থাকার সুযোগ নেই। এই ভাইরাস সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও বলেছে, যেসব মানুষ নিয়মিত লাশ দাফন বা এর দাফন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাদের যক্ষ্মা, রক্তবাহিত ভাইরাস (যেমন হেপাটাইটিস-বি, সি ও এইচআইভি) এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (যেমন কলেরা, ই-কোলি, হেপাটাইটিস-এ, রোটাভাইরাস ডায়রিয়া, সালমানেলোসিস, শিগেলোসিস এবং টাইফয়েড/প্যারাটাইফয়েড জ্বরে) সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
সংস্থাটি জানায়, এসব তথ্য ও ঝুঁকির কথা একই সঙ্গে জরুরি বিভাগের কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া উচিত, যাতে যথাযথ পূর্বসতর্কতা অবলম্বন করা যায়, যখন মৃতদেহ নাড়াচাড়া করা হয়। একই সঙ্গে আতঙ্ক ও ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যায়।
Leave a reply