আহমেদ রাকীব, বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন
হাথুরুসিংহের প্রিয় শিষ্য সৌম্য সরকারকে ওয়ানডে দলেই রাখেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি। অথচ ২০১৪’র মে’তে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেয়ার পরই কোচের সবচেয়ে পছন্দের ক্রিকেটার ছিলেন সৌম্য। যেসব ক্রীড়া সাংবাদিক নিয়মিত জাতীয় দল ফলো করেন, তারা জানেন আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে কতো বড় অসাধ্য সাধন করলেন নির্বাচকরা।
নি:সন্দেহে হাথুরুসিংহের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট কোচিং দর্শনের সঙ্গে যুতসই ছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু, খুবই দৃষ্টিকটুভাবে সৌম্যকে দিনের পর দিন বাড়তি সময় দিয়েছেন এ লঙ্কান কোচ। দলের অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারের জন্য নেটে যখন ব্যাটিং অনুশীলনের জন্য সময় বরাদ্দ থাকতো না, তখন সৌম্য’র জন্য ছিলো অঢেল সময়। ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিন সৌম্যকে নিয়ে আলাদা করে সেশন করতেন চান্দিকা। আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন সৌম্য সরকার। ৩২ ওয়ানডেতে ৩৪ দশমিক ৫৩ গড়ে রান করেছেন ৯৬৭ রান। এ পরিসংখ্যানের চেয়েও হাথুরুসিংহের বড় দুর্বলতা ছিল প্রতিপক্ষ বোলারের উপর সৌম্য’র চড়াও হওয়ার মানসিকতা।
দলকে শক্ত ভীতের উপর দাঁড় করিয়ে দেয়ার সঙ্গে ড্রেসিং রুমে স্বস্তির একটা বাতাস ছড়িয়ে দিতো ২২ গজে সৌম্য’র খুনে মানসিকতা। কিন্তু, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম কোচের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ছিলো অন্যদের প্রতি তার বিমাতাসুলভ আচরণ। আবার কারও প্রতি ভালোবাসা দীর্ঘও হতো না। ছোট-খাট ব্যাপারেই হয়তো অনেক সিনিয়রকে নিজের অপছন্দের তালিকায় ছুঁড়ে ফেলে দিতেন। ব্যতিক্রম কেবল সৌম্য সরকার।
হাথুরুসিংহের সবচেয়ে পছন্দের শীষ্যকে ছেঁটে ফেলে অবশ্য ভিন্ন এক বার্তাও দিয়ে রাখলো টিম বাংলাদেশ। সেটি হলো সৌম্য’র চেয়েও ভালো ফর্মে থাকায় ফিরে এসেছেন হাথুরুসিংহের ‘অপছন্দ’র কেউ। দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে গেল ২ মৌসুম ধরে যিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। বলছি এনামুল বিজয়ের কথা। কিন্তু, সৌম্যকে বাদ দিয়ে বিজয়কে দলে নেয়ার সিদ্ধান্ত এতো সহজ ছিলো না। সুযোগটা অবশ্য করে দিয়েছেন সৌম্য সরকার নিজেই।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের পর থেকেই সময়টা বেশ বাজে যাচ্ছে এই বাঁ-হাতির। ডাবলিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬১ আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার না মানা ৮৭ রানের ইনিংসের পর থেকেই অফ ফর্মে সৌম্য। পুরো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই যার খেসারত গুনেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮ ছাড়া ২ অঙ্কের স্কোর নেই। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর ভারতের বিপক্ষে রান ছিলো যথাক্রমে (৩,৩ আর ০)। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানেডেতে করেছেন ৮। মনোবলে এতোটা পিছিয়েছেন যে, বিপিএল কিংবা এনসিএলেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।
ওদিকে, দিনের পর দিন নিজেকে তৈরি করেছেন এনামুল বিজয়। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইনজুরিতে পড়ার পর থেকেই যিনি জাতীয় দলে ব্রাত্য। অথচ ওয়ানেডেতে সৌম্য’র চেয়েও সমৃদ্ধ পরিসংখ্যান এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের। ৩০ ম্যাচে ৩৫ দশমিক ১৮ গড়ে বিজয় রান করেছেন ৯৫০। জাতীয় দলে ফেরার পথ অবশ্য অবারিত করেছে অনুর্ধ্ব ১৯ দলের সাবেক অধিনায়ক এনামুল বিজয়ের সাম্প্রতিক ফর্ম। জাতীয় লিগে চ্যাম্পিয়ন খুলনা বিভাগের জার্সিতে করেছেন ৬১৯ রান। যা এবারকার লিগে সর্বোচ্চ। আছে ২ ডাবল সেঞ্চুরি। আর গেল ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও গাজী গ্রূপ ক্রিকেটার্সের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা ছিলো তার। ৩৭ দশমিক ২৫ গড়ে বিজয় গেলো আসরে রান করেছেন ৫৯৬।
বিপিএলে অবশ্য সৌম্য-লুক রঙ্কি’র ভিড়ে চিটাগং ভাইকিংসের জার্সিতে নিজের পছন্দের জায়গায় ব্যাট করতে পারেননি। বেশিরভাগ ম্যাচই খেলেছেন মিডল অর্ডারে। কিন্তু, বিপিএলের পরই জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ডে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে পেয়ে যান একই আসরে নিজের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। ২৫১ বল খরচায় করেছেন ২০২ রান। ডাবল সেঞ্চুরির চেয়েও বড় ছিলো বিজয়ের ক্রিজে টিকে থাকার মানসিকতা। ৭ ঘণ্টারও বেশি সময় বিকেএসপিতে ব্যাট করছেন এনামুল বিজয়। এই ধৈর্য্যের গুণেই পেছনে ফেলেছেন সৌম্যকে। ঠাঁই পেয়েছেন জাতীয় দলে।
যমুনা অনলাইন: এআর/টিএফ
Leave a reply