কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ থেকে কুড়িগ্রামে মানুষ আনার আয়োজন চলছে। কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল কচাকাটা থেকে নদী পথে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে মঙ্গলবার বিকেলে দু’দফায় চারটি নৌকা রওনা দিয়েছে। বুধবার সকালে আরও কয়েকটি নৌকা রওনা দেয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে গুঞ্জন আছে স্থানীয়দের মাঝে।
নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এবং ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়া নৌকার মাঝিদের কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- রোস্তম আলী, জিয়ার, মোজাম্মেল, শহিদ আলী, আয়নাল হক। এদিকে, সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়ার প্রস্তুতিকালে বল্লভের খাষ ইউনিয়নের গংগাধর নদীর মাদারগঞ্জ ঘাট
থেকে দুইটি নৌকাকে আটক করেছে কচাকাটা থানা পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার শ্রমিক দীর্ঘদিন থেকে মুন্সিগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ইটখোলায় কাজে নিযুক্ত রয়েছে। করোনার প্রভাবে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে এসব শ্রমিক সেখানেই আটকা পড়ে। কাজ না থাকায় আটকা পড়া এসব শ্রমিক নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মানবেতর পরিস্থিতিতে পড়ে। তারা পরিবারের লোকদের সাথে যোগাযোগ করলে আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবার জন প্রতি তিন/চার হাজার টাকায় এসব নৌকা ভাড়া করেছে।
এদিকে, ইউনিয়নটির চেয়াম্যান আব্দুল আউয়াল প্রত্যেক নৌকার মাঝিকে একটি করে ট্রেড লাইসেন্স এবং একটি করে প্রত্যয়নপত্র ধরিয়ে দেন যেন পথিমধ্যে প্রশাসনের লোকজন তাদের আটক না করে। প্রত্যয়নপত্রে চেয়াম্যান উল্লেখ করেন, এসব আটকে পড়া শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হচ্ছে এবং তাদেরকে ফিরিয়ে এনে ইউনিয়নটির ৯নং ওয়ার্ডের আবাসনের কক্ষে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানার ওসি, এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকাতার সাথে কথা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।
জহুরুল নামের একজন মাঝি জানান, প্রত্যয়নপত্রে চেয়ারম্যানের নাম থাকলেও কোনো সই, সিল না থাকায় আমি সেটি নেইনি। দেশের এমন পরিস্থিতিতে আমি না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমার ছোট নৌকায় ৫০/৬০জন মানুষ আনা গেলেও সেটি খুবই ঝুঁকি হয়ে পড়ে। অন্য বড় নৌকায় ১০০/১৫০ লোক আনা সম্ভব।
চিলমারী নদী বন্দরের নৌকা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল লিপু জানান, এখান থেকে নারায়ণগঞ্জ নৌ পথে যেতে সময় লাগে প্রায় ৭/৮ ঘন্টা। কচাকাটা থেকে নারায়ণপুর, ভিতরবন্দ, বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, যাত্রাপুর, মোগলবাসা, চিলমারী, গাইবান্ধা সদর ঘাট, বাহাদুরা ঘাট, ফুলছড়ি, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর থানা, সিরাজগঞ্জ সদর থানা, বেতিল থানা, শাহজাদপুর, মানিকগঞ্জ বেড়া থানা,আরিচা ঘাট, দোহার থানা, শ্রীনগর থানার ময়াঘাট, ঘোড়াদৌড় এবং মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছাতে হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন মাঝি বলেন, নদীপথে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জ থেকে ইতিমধ্যে অনেকেই কুড়িগ্রামে ফিরেছেন।
এই বিষয়ে কচাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল প্রত্যয়নপত্রের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি তাদেরকে একটি করে ট্রেড লাইসেন্স এবং একটি করে নাগরিকত্ব সনদ দিয়েছি। তাদের ঢাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করেছি।
এই বিষয়ে পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, খবর পেয়ে আমরা দু’জন মাঝিকে আটক করেছি। তাদের কাছে এই বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তবে কুড়িগ্রাম থেকে কেউ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে কিংবা আসতে পারবে না। সড়ক এবং নৌ পথ উভয় দিকে আমরা আইনশৃংখলা জোরদার করেছি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, করোনার সংক্রামণ ঠেকাতে জেলা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নৌ পথে যাতায়াতের জন্য নৌকা চলাচলও বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি।
Leave a reply