ঢাকায় সহস্রাধিক বাড়ি লকডাউন

|

ঢাকা মহানগরীতে সহস্রাধিক বাড়ি ও ভবন লকডাউন করা হয়েছে। যেসব এলাকায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রোগী শনাক্ত হচ্ছে ওই সব ভবন ও এর পার্শ্ববর্তী ভবন এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে পুরো এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে।

যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে সূত্র বলছে, লকডাউনের আওতায় পড়া বাড়ি কিংবা ভবনের সংখ্যা হাজার ছাড়াবে।

ঢাকা মহানগরের ৫০ থানার মধ্যে ৩৪টিতেই করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে। এসব এলাকায় শনিবার পর্যন্ত ২৩৪ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। তারা আক্রান্ত হওয়ায় তাদের বসবাসরত ভবন ও পার্শ্ববর্তী ভবনও লকডাউন করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্তের কাজ করছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তারা করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই রোগীর ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করে তার বাড়ি বা এলাকা কোয়ারেন্টিন কিংবা লকডাউন করছে। তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। ডিএমপির রমনা থানার মগবাজারের রিজেন্ট টাওয়ার লকডাউন করা রয়েছে। এ বাড়িটিতে অনেক বাসিন্দা।

তবে তাদের প্রয়োজনে বের হতে দিচ্ছে পুলিশ। ধানমণ্ডি থানা এলাকার ৫, ৬-এ এবং ২৮ নম্বর সড়কে ৩টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। হাজারীবাগ থানার গণকটুলি ২০/২২ ও ১০/১, জিগাতলা ৪২/৮ এবং শংকর বেকারি গলির একটি বাড়িসহ ৪টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

এসব বাড়ি এড়িয়ে চলার জন্য এলাকাবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে। কলাবাগান থানার সেন্ট্রাল রোডের একটি বাড়ি এবং গ্রিন রোডের একটি বাড়ি লকডাউন রয়েছে। এদিকে লালবাগ থানা এলাকায় লালবাগ সড়কে দুটি বাড়ি, বড়বাট মসজিদ এলাকায় একটি ভবন এবং চায়নাগলিতে ছয়টি বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ। কোতোয়ালি থানা এলাকায় একটি ভবন লকডাউন করা হয়েছে।

বংশাল থানা এলাকার মেরিনার্স টাওয়ার, সিদ্দিকবাজারের ১৩৩ নম্বর ভবন, আলী নেকীর দেউরী রোডের মসজিদ সংলগ্ন দশটি ভবনসহ এলাকার ২০০টির বেশি ভবন, একই সড়কের ৪৩/১১ নম্বর বাড়ি, ২৩১ বংশাল বাড়ি এবং ১/৩২ টেকেরহেড লেনের ৫০টির বেশি বাড়ি লকডাউনের আওতায় রয়েছে। বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির জানান, সবাইকে নিরাপদে রাখতে লকডাউনসহ নানা প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কামরাঙ্গীরচর এলাকায় একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

এদিকে চকবাজার থানার বুয়েটের শিক্ষকদের একটি কোয়ার্টার, খাজে দেওয়ান প্রথম লেন ও দ্বিতীয় লেনের দুই শতাধিক বাড়ি, উর্দু রোডের চারটি বাড়ি এবং ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সূত্রাপুর থানা এলাকার ৩৯ নন্দলাল রোড, ২৪ নন্দলাল রোড, ২৫ নন্দলাল রোড, ঋষিকেশ দাস লেনের একটি করে বাড়ি, ২১/১/২৩ জাস্টিস লাল রোড, ২৩/২৩ জয়চন্দ্র ঘোষ রোড এবং পিসি ব্যানার্জি রোডের একটি বাড়িসহ ৫টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

ওয়ারী বিভাগের পাঁচটি থানায় নয়টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। ওয়ারী থানা এলাকার বনগ্রাম রোডের একটি ভবন ও র‌্যাংকিং স্ট্রিট রোডে একটি ভবন লকডাউন করেছে পুলিশ। এছাড়া ডেমরা থানা এলাকার ধার্মিকপাড়া কোনাপাড়া এলাকার একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

যাত্রাবাড়ী থানার মীরহাজীরবাগ এলাকার নবীনগর গলির একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। গেণ্ডারিয়ার গুরুদাস লেনে একটি বাড়ি, ডিসটিলারি রোডের ১৩১ নম্বর বাড়ি, নাওয়াপাড়া ৭৯/এ এবং লালখান এলাকার ৮৪/১৬ নম্বর বাড়িসহ ৪টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

কদমতলী থানার পাটেরবাগ এলাকার একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এদিকে সবুজবাগের নন্দিপাড়ায় জিরো গলির ১টি বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ। পল্টন মডেল থানা এলাকায় তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সেগুলো হল- কালভার্ট রোডে দুটি বাড়ি ও শান্তিনগর হোয়াইট হাউস ভবনের উল্টোদিকের একটি বাড়ি।

মুগদা থানার উত্তর মানিকনগরে আনন্দধারা এলাকার একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। শাহজাহানপুর থানার উত্তর শাহজাহানপুরের দীপশিখা রোডের চারতলা একটি বাড়িতে একজন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বাড়িটি লকডাউন করে দিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি দীপশিখা সড়ক দিয়ে মানুষকে চলাচল করতে নিষেধ করা হয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানার ১১ নম্বর, ১৪ নম্বর ও ৭ নম্বর সেক্টরে তিনটি সড়ক লকডাউন করেছে পুলিশ।

দক্ষিণখানে একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। গুলশানে তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। গুলশান-১ এর ১৫ নম্বর সড়কের একটি বাড়ি, গুলশান-২ এর একটি বাড়ি এবং শাহজাদপুরের একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। বাড্ডা থানার উত্তর বাড্ডা এলাকার খানবাগ রোডের একটি বাড়ি, স্বাধীনতা সরণির একটি বাড়ি ও হাজীপাড়ার একটি বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ।

খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২ এর ১১ নম্বর রোড লকডাউন করা হয়েছে। ভাটারা থানার অ্যাপোলো হাসপাতাল সংলগ্ন পাঁচতলা একটি ভবন লকডাউন করেছে পুলিশ। বাড়িটিতে বাইরে থেকে কাউকে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

তেজগাঁও মডেল থানা এলাকার শাহীনবাগের একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা রোডের একটি বাড়ি, তাজমহল রোডের একটি বাড়ি, কৃষি মার্কেট রোডের মুখে একটি বাড়ি, বাবর রোডের একটি বাড়ি এবং বসিলার উত্তরমোড়া এলাকার একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এসব এলাকার সড়ক প্রথমে লকডাউন করা হলেও পরবর্তী সময়ে শুধু বাড়িগুলো লকডাউন করা হয়েছে।

আদাবরের ১৭ নম্বর সড়ক লকডাউন করেছে আদাবর থানা পুলিশ। ওই সড়কের একটি বাড়িতে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর আদাবরের সব সড়কেই চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে পুলিশ। ঘিঞ্জি এলাকাটিতে পুলিশের তল্লাশি চৌকিও বসানো হয়েছে।

অপ্রয়োজনে কেউ বের হলেই তাকে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় মোতাহার বস্তি লকডাউন করেছে পুলিশ। আইইডিসিআরের নির্দেশে বস্তিটি লকডাউন করা হয়েছে। বস্তিতে ৪ শতাধিক ঘর রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। মিরপুর মডেল থানা এলাকায় তিনটি বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ।

পীরেরবাগে একটি বাড়ি, শাহ আলীবাগে একটি এবং মিরপুর-১০ নম্বর সেকশরের ৭ নম্বর সড়কের একটি বাসা। পল্লবী থানার (মিরপুর-১১) সেকশন-১১ বি-এর ১ নম্বর সড়কের তিনটি বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ। ৪৬, ৪৮ ও ৫০ নম্বর বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

৪৮ নম্বর ছয়তলা বাড়িটিতে একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী ছিলেন। রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বাড়িটির দুই পাশের বাড়ি লকডাউন করে পুলিশ। কাফরুল থানার মিরপুর-১৩ সেকশনের ১/১ রোডের ৪২ ও ৪৩ নম্বর বাসা লকডাউন করেছে পুলিশ। বর্তমানে ওই সড়ক পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছে। শাহ আলী থানা এলাকার সি-ব্লকের ১১ নম্বর সড়কের একটি ছয়তলা বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ। দারুসসালাম থানার উত্তর টোলারবাগের একটি আবাসিক এলাকা এখনও লকডাউন রয়েছে।

এ এলাকায় দুই শতাধিক ভবন রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগেও সুরক্ষিত থাকার লক্ষ্যে বাড়িঘর লকডাউন করে রাখা হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, আমরা লকডাউন করা বাড়ির কোনো তালিকা তৈরি করিনি। আইইডিসিআর যখন যে বাড়িতে রোগী শনাক্ত করে, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই বাড়ি ও প্রয়োজনে এর আশপাশের বাড়ি লকডাউন করা হয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply