রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলাটি ১৯ বছরেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। নিম্ন আদালতে রায় হলেও হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শুরুই হয়নি। কবে নাগাদ শুনানি শুরু হবে, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে সাক্ষীর অভাবে ঝুলে আছে একই ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের অপর মামলাটিও।
২০০১ সালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় করা দুই মামলার মধ্যে হত্যা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ দেন আদালত। মামলায় সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৪ আসামি এখনও পলাতক।
জানতে চাইলে হাইকোর্টের সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল বলেন, আলোচিত এ হত্যা মামলাটি ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে উঠলেও কিছুদিন পর তা দৈনন্দিন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য আরও একটি বেঞ্চে যায়। কিন্তু পরে আর তা হয়নি।
বিস্ফোরক আইনের মামলা প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে। আশা করছি, দ্রুতই মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর কৌঁসুলি আবু আবদুল্লাহ ভূঞা বলেন, মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ত্বরান্বিত করতে রাষ্ট্রপক্ষের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সরকারি ছুটি শেষ হলেই তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ হবে। এর পরই সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব শেষ হবে।
২০০১ সালের পহেলা বৈশাখের দিন ভোরে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয় এবং পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে তা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি এবং ১০-১৫ মিনিট পর আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। ঘটনাস্থলে সাত ব্যক্তি প্রাণ হারান। পরে আরও তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।
এতে ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আসামিদের মধ্যে পলাতক ৪ আসামি হলেন : সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই।
কারাগারে থাকা অপর ৯ আসামি হলেন : মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলাল উদ্দিন, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া। এ ছাড়া শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সীর ফাঁসি কার্যকর হয় অপর এক মামলায়। ফলে এই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
ঝুলে আছে বিস্ফোরক আইনের মামলা : ২০০৯ সালে চার্জ গঠনের পর বিস্ফোরক মামলায় প্রথম সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। এ মামলায় মোট ৮৪ জনের মধ্যে ৫২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি বিচারাধীন।
Leave a reply