রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন ধ্বংস হবে, এই আশঙ্কা আবারো উচ্চারিত হলো বার্লিনের এক সম্মেলনে৷ এতে অংশ নিয়েছিলেন দেশি, বিদেশি শতাধিক শিক্ষার্থী, গবেষক, পরিবেশবাদী এবং বিশেষজ্ঞ৷
সম্মেলনে, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বাঁচাবার দাবি ও বিকল্প জ্বালানি বিষয়ক সম্ভাব্য নীতি খুঁজে দেখার দাবি করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ইউরোপীয় নেটওয়ার্ক।
গত ১৯ ও ২০ আগষ্ট বার্লিন শহরের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার কেন্দ্রে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনের শেষ দিন রবিবার রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করে সুন্দরবন বাঁচাতে বার্লিন ঘোষনাপত্র প্রকাশ করা হয়।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো এবং জীবাশ্ম জ্বালানির নেতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করে ইতোমধ্যে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ নির্বিশেষে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা থেকে সরে এসে পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে।
দুইদিনব্যাপী এই সম্মেলনে বাংলাদেশে রামপাল প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব ও বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানির সম্ভ্যবতা নিয়ে চারটি সেশনে সর্বমোট আটটি প্রবন্ধ পাঠ করেন আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগণ। জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, হল্যান্ড, নরওয়ে ও জার্মানিতে বসবাসরত ছাত্র-ছাত্রী, গবেষক ও পেশাজিবীরা সম্মেলে অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত প্রকাশ করেন।
সম্মেলনে বক্তারা সুন্দরবনকে শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং বিশ্ব জলবৈচিত্র্যের সম্পদ বলে অভিহিত করেন এবং তা রক্ষা করতে সবাইকে সোচ্চার হবার আহবান জানান। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক ভীলফ্রেড এন্ডলিশার।
বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানির বিশাল সুযোগ আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক হার্টমুট বেরভোল্ফ।
তেল–গ্যাস–খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বিগত বিভিন্ন সরকারের গাফিলতির কারণে দেশীয় জ্বালানি ও পরিবেশ সম্পদের ক্ষতির বর্ণনা দেন। বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাহবুব সুমন, বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানির প্রয়োগ ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।
বার্লিনে রামপাল ও বিকল্প জ্বালানি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ‘বার্লিন ঘোষণাপত্র’র সাথে পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য বিষয়ক সংগঠন গ্রিনপিস, ফ্রেন্ডস অব দ্যা আর্থ, উইমেন এনগেজ ফর দ্য কমন ফিউচার, ব্যাঙ্কট্রাকসহ সারা বিশ্বের প্রায় একশ’ সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেছেন।
বার্লিন ঘোষনাপত্রে, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্হাপনের কারণে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভের সম্ভাব্য ক্ষতি, এশিয়া ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের উধাহরণ গ্রহণ করে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণসহ বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক প্রকল্পসমূহ বন্ধের আহবান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটের রামপালে ভারতের সহায়তায় ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে৷ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যাপক সমালোচনা হলেও সরকার মনে করছে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এই কেন্দ্রের প্রয়োজন রয়েছে৷
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply