কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
স্বামী নেই মেয়েকে নিয়ে এক বৃদ্ধা মা মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভিক্ষাবৃত্তি আর অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চললেও করোনার প্রভাবে এখন খেয়ে না খেয়ে ঝুঁপড়ি ঘরেই দিনযাপন করছেন অসহায় মা-মেয়ে। নি:স্ব এই পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি কোন ধরনের ভাতা কিংবা জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা।
ভিক্ষাবৃত্তি আর অন্যের বাড়িতে কাজ করেই চলে মা-মেয়ের সংসার। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ঝড়ে বছর তিনেক আগে একমাত্র থাকার টিন সেডের ঘরটি ভেঙ্গে যায়। ভিক্ষা করে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে যায় দিন। সেখানে ঘর ঠিক করাটা যেন একটা দু:স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না। অর্থাভাবে ঘরটি ঠিকঠাক করার সামর্থ্য হয়নি বৃদ্ধা ছালেহা বেওয়ার। তাই দীর্ঘদিন ধরে ভেঙ্গে পড়া ঘরের দরজা-জানালা না থাকায় টিন ফাঁকা করে হামাগুড়ি দিয়ে ঢোকেন এবং বের হন বৃদ্ধা ছালেহা বেওয়া। হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করে মাটিতেই ছেড়া-ফাঁটা কাপড় এবং কাঁথা দিয়ে বিছানা করে ঘুমাতে হয় তাকে। আর পাশে একটা ঝুপড়ি ঘরের ব্যবস্থা করে মেয়ে শাহিদা থাকেন।
বর্তমানে করোনা সংক্রমণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার নিষেধাজ্ঞা থাকায় এই পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। এমনই মানবেতর জীবন-যাপন করছে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার নাজিম খাঁ ইউনিয়নের ঝাড়িঝাড় গ্রামের বাসিন্দা ছালেহা বেগম (৭০) এবং তার মেয়ে শাহিদা বেগম (৪০)।
বৃদ্ধা ছালেহা বেওয়া জানান,স্বামী বদিয়ত উল্লাহ মারা গেছেন প্রায় ৩০/৩৫ বছর হবে। একমাত্র মেয়ে শাহিদা বেগমকে নিয়েই তার সংসার। জন্মের পরে বাবাকে দেখেনি শাহিদা বেগম। প্রায় বছর ২০ আগে অনেক স্বপ্ন দেখে মেয়েকে বিয়ে দেন উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শমেস কাজির সাথে। বিয়ে হলেও স্বামীর বাড়ি যাওয়া হয়নি শাহিদার। মেয়ের জ্ঞান-বুদ্ধি কম থাকায় স্বামী ছেড়ে গেছে প্রায় ১৭ বছর আগে। ভিটে-মাটি পৈতৃকভাবে পাওয়া ১০ শতক জমি রয়েছে বৃদ্ধা ছালেহা বেওয়ার। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা শীত-গরমে দিন কেটে গেলেও কেউ খোঁজ রাখেনি।
তিনি আরো বলেন, মেম্বার-চেয়ারম্যানের পাও ধরছং তাও মোক কোন ভাতা আর ইলিফের চাল দেয় নাই। এলা কি ভাইরাস বের হইছে ঘর থাকি বেরা যায় না। ভিক্ষা করবার পাং না। চেয়ারম্যানের কাছত গেছং চেয়ারম্যান কই তুই ভিক্ষা করি খাস তোর কি সাহায্য নাগে।
শাহিদা বেগম বলেন, মুই মানসের বাড়ি-বাড়ি কাজ করি। করোনার কারণে সেই কাজও প্রায় বন্ধ। কোনদিন কাজ জুটলে মা-মেয়ে দু’জনের খাবার জোটে না হলে উপোস থাকা নাগে। শুনছি সরকারি ঘর বিনামূল্যে পাওয়া যায়। হামরা রিলিফ পাইনা আরো ঘর দিবে হামাক।
প্রতিবেশি মজিবর রহমা ও তাহেরা বেগম বলেন, মা-মেয়ের দুর্দশার কথা প্রতিবেশিরা সবাই জানে। স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যান কোন কিছুই দেয় না। শোনা যায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থাকলেও জন প্রতিনিধিদের স্বজন প্রীতি আর দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত হয়ে আসছে এই পরিবারটি। প্রাকৃতিক কাজ সারতে গেলেও জঙ্গলে যেতে হয় তাদের। এমন খারাপ দেখে স্থানীয় কিছু যুবক মিলে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছে।
নাজিম খাঁ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক পাটেয়ারী সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন,আমি এখন করোনার জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছি। যেকোন বিষয় পরে কথা হবে।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, চাহিদা মোতাবেক ত্রাণের পরিমাণ অপ্রতুল। তবে তিনি এমন অসহায় পরিবারের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
Leave a reply