অবশেষে বকেয়া বেতন পেল সাকিব আল হাসানের হ্যাচারির শ্রমিকরা। বুধবার বিকেলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীতে প্রতিষ্ঠিত সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের শ্রমিকদের বেতন বুঝিয়ে দেয়া হয়। এসময় ১৫০ জন শ্রমিকের যাবতীয় পাওনা হিসেবে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। যার সম্পূর্ণটাই সাকিব আল হাসানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সাকিব আল হাসানের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতা করেন সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল ফেডারেশন ও সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নাসেরু হক, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মিল্টন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্সসহ চিংড়ি বাংলা একাডেমির তিনজন কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স জানান, শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি মিডিয়ায় আসলে ঢাকা থেকে একজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল ফেডারেশন ও সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নাসেরুল হকের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি দেখভাল করার অনুরোধ জানান। নির্দেশনা পেয়ে তিনি মঙ্গলবার সাকিবের কাঁকড়া ফার্মে যান এবং সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে আসেন। বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো তিনি সেখানে যান এবং ১৫০ জন শ্রমিককে ডেকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেন। এসময় সেখানে ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক সগীর হোসেন পাভেল ও ম্যানেজার সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সাকিব আল হাসানের কাঁকড়া খামার প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক ক্রিকেটার সগীর হোসেন পাভেল বলেন, ভালো লাগছে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করে দিতে পেরে। আমাদের টার্গেট ছিলো ৩০ তারিখের মধ্যে বেতন শোধ করার। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। শ্রমিকদের বেতন দেরিতে দেওয়ার জন্য আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এসব শ্রমিকদের নিয়ে বিগত চার বছর ধরে কাজ করছি। বেতন নিয়ে কখন কোন সমস্যা হয়নি। করোনার কারণে একটু দেরি হয়ে গেল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব শ্রমিকদের নিয়ে আমরা আবারও কাজ করবো।
সাকিব আল হাসানের হ্যাচারির নারী শ্রমিক মনোয়ারা বলেন, করোনার কারণে খুব কষ্টে দিন পার করছিলাম। বেতন পেয়ে ভালো লাগছে। দুই বছর ধরে সাকিব আল হাসানের হ্যাচারিতে কাজ করছি। এর আগে বেতন নিয়ে কোনও সমস্যা হতে দেখিনি। আমাদের সমস্যায় সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সাকিব আল হাসান এগ্রো ফার্মের জেনারেল ম্যানেজার সালাউদ্দিন বলেন, ফার্মের শ্রমিকদের বেতন সাকিব ভাই ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করে দিতে বলেছিলেন। তিনি তার নিজের তহবিল থেকে তাৎক্ষণিক বকেয়া বেতন পরিশোধ করার টাকা দেওয়ায় আমরা আর দেরি না করে সকল শ্রমিকদের বেতন দ্রুত পরিশোধ করে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমারা তিনটা শিপমেন্ট রেডি করছিলাম কিন্তু করোনার কারণে সেগুলো রফতানি করতে পারিনি। সে কারণে শ্রমিকদের বেতন দিতে দেরি হয়েছে। এ জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক একেএম আনিছুর রহমান বলেন, সাকিব দেশের গর্ব। সাতক্ষীরা থেকে তার দুর্নাম ছড়াক সেটা আমরা চাই না। বিষয়টি জেনে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতিসহ আমরা উদ্যোগ নিয়ে উদ্যোগ নিয়ে ফার্ম কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা পৌঁছে দিয়েছি। তারা সকল শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করে দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, চার মাসের বেতন না পেয়ে সোমবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীতে অবস্থিত সাকিব আল হাসান এ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের প্রায় দুই শত শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেন। তবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে আন্দোলন করায় র্যাবের একটি টহল টিম শ্রমিকদের হটিয়ে দেয়। এরপর সোমবার (২০ এপ্রিল) রাতে শ্রমিকদের বেতন বকেয়ার বিষয়টি জানার পর দ্রুতই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
২০১৬ সালে বুড়িগোয়ালিনীতে রপ্তানিমুখী কাকড়া ফার্ম গড়ে তোলেন সাকিব। গত ৪ বছর ভালই চলেছে। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। গত জানুয়ারিতে সর্বশেষ বেতন পায় শ্রমিকরা। এর মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য কয়েকবার দিনও পরিবর্তন করে ফার্ম সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল বকেয়া পরিশোধের জন্য সময় নিয়েছিল তারা। এর মধ্যে হঠাৎ সোমবার (২০ এপ্রিল) বকেয়া পরিশোধের দাবিতে ফার্মের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। তবে, শ্রমিকদের পাওনার বিষয়ে কিছুই জানতেন না উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
Leave a reply