বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে ৯১ শতাংশ শিশু মানসিক চাপে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ভিশনের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ শিশু ও তরুণদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছে- তা জানতে গত ২ মাসে উন্নয়নশীল ১৩টি দেশে একটি জরিপ পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক শিশুকেন্দ্রিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন।
শিশু ও তরুণদের অংশগ্রহণে ‘চিলড্রেন ভয়েসেস ইন দ্যা টাইম অব কোভিড-১৯’ শিরোনামে এই জরিপে দেখা যায় যে শিশুরা এই পরিস্থিতে মানসিক বেদনা ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। তবে বৈশ্বিক এই মহামারী প্রতিরোধে তারাও ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত- জরিপে তাও উঠে এসেছে।
মহামারীর সময়ে জীবনে ছন্দপতনের জন্য সরাসরি তিনটি কারণকে উল্লেখ করেছে ১৩টি দেশ থেকে জরিপে অংশ নেয়া শিশুরা। কারণগুলো হল- শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া, সামাজিক দূরত্বের কারণে মানসিক বেদনা এবং পরিবারে দারিদ্র বেড়ে যাওয়া।
শতকরা ৯১ ভাগ শিশু ও তরুণরা বলছে, স্কুল বন্ধের কারণে তারা নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ অনুভব করছে। যেসব দেশে জরিপ পরিচালিত হয়েছে সেখানে দারিদ্র ও বিশুদ্ধ পানির অভাব বিদ্যমান। যা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তুলছে। ফলে শিশুদের মনেও উদ্বেগ বাড়ছে।
জরিপে অংশ নেয়া ৯১ ভাগ শিশু স্বীকার করেছে, এই অনিশ্চয়তা এবং বিচ্ছিন্নতা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে তারা উদ্বেগ, রাগ ও শঙ্কাসহ নানা ধরনের মানসিক চাপে রয়েছে।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা হারিয়ে ফেলায় শিশু ও তরুণরা অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লকডাউন প্রসারিত ও দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা বঞ্চিত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুরা পড়াশোনা করতে পারছে না। যা তাদের অনেক সহপাঠীরা করছে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি শিশু স্কুল মিল থেকে এখন বঞ্চিত, অভিভাবকরা চাকরি এবং জীবিকা হারিয়ে সন্তানদের খাবার জোগাড়ে অক্ষম।
ওয়ার্ল্ড ভিশন পার্টনারশিপের অ্যাডভোকেসি ও এক্সটার্নাল অ্যানগেজমেন্টের প্রধান ডানা বুজডুসিয়ে বলেন, শিশুরা তাদের বলেছে- এ পরিস্থিতে দ্বিধা, ভয় এবং হতাশা থেকে তারা বন্ধু এবং স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে না। মিস বুজডুসিয়ে বলেন- শিশুরা অসহায় নয়, তারা এই মহামারীর অদৃশ্য শিকার। তার পরিবর্তনের শক্তিশালী অনুঘটক, শিশুরা সবার সঙ্গে মিলেমিশে তাদের সমাজের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের অংশগ্রহণের অধিকার যে কোনো বিষয়ে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে। সামাজিক পরিবর্তনে শিশু ও তরুণদের অংশগ্রহণ তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, এবং তারা অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, এই বোধ তাদেরকে সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।
ব্রাজিলের ৭ বছর বয়সী লারা বলছে, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শের মধ্যে হাত ধোয়া অন্যতম। কিন্তু যেখানে আমরা থাকি, সেখানে আমাদের কাছে পানি নেই। অনেক পরিবার সপ্তাহে একবার পানি পায়। তাহলে কীভাবে তারা স্বাস্থ্যবিধি পালন করার সুযোগ পাবে? তারা তা করতে পারবে না। ফলে সংক্রমণ বাড়বে। এই মানসিক চাপের অনুভূতি সত্ত্বেও, শিশু এবং তরুণরা নিজেদের কমিউনিটিতে কোভিড-১৯ এর বিস্তার প্রতিরোধের লড়াইয়ে অবদান রাখার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তারা বলেছে যে অনলাইন এবং অন্যান্য দূরবর্তী সহযোগিতার মাধ্যম ব্যবহার করে ভাইরাসের বিস্তার থেকে রক্ষা পেতে মানুষকে সচেতন করতে শিশুদের সম্পৃক্ত করা খুবই প্রয়োজন ছিল।
এই জরিপে ১৩টি দেশের ১০১ জন শিশু ও তরুণের (৫৮ মেয়ে এবং ৪৩ ছেলে ) সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। যাদের বয়স ৮ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। দেশগুলো হল- আলবেনিয়া, বাংলাদেশ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ব্রাজিল, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, মঙ্গোলিয়া, নিকারাগুয়া, পেরু, ফিলিপাইন, রোমানিয়া, সিয়েরা লিওন এবং তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া সিরীয় শিশুরা।
Leave a reply