করোনা প্রতিরোধে রেমডেসিভিরের কার্যকারিতার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ’-এর পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউচি।
এই স্বনামধন্য বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে রেমডেসিভির গ্রহণকারীরা অন্যদের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে এই ওষুধ মৃত্যুহার কমাতে ভূমিকা রাখে কিনা, তা এখনও প্রমাণিত হয়নি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে এটি একটি দুর্দান্ত ঘটনা, তবে এটি কোনো ‘ম্যাজিক বুলেট’ নয়। প্রসঙ্গত, ম্যাজিক বুলেট বলতে সেই ধরনের প্রতিষেধককে বোঝানো হয়, যা কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীরের ভেতরকার সুনির্দিষ্ট অণুজীবকে ধ্বংস করতে পারে।
বুধবার হোয়াইট হাউসে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ-এর তত্ত্বাবধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১০৬৩ মানুষের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন ফাউচি। এদের একাংশকে রেমডেসিভির দেওয়া হয়েছিল। বাকীদের দেওয়া হয়েছিল অন্য ওষুধ (প্লেসেবো)। দেখা গেছে,
রেমডেসিভির গ্রহণকারীরা গড়ে ১১ দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু প্লেসেবো গ্রহণকারীরা ছাড়া পেতে সময় নিয়েছেন গড়ে ১৫ দিন।
ফাউচি বলেন, আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য থেকে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার সময়সীমাকে কমিয়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে রেমডেসিভি সুস্পষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
তিনি জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, রেমডেসিভির গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার যেখানে ৮ শতাংশ ছিল, প্লেসেবো গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার সেখানে ছিল ১১.৬ শতাংশ। তবে এই ফলাফল পরিসংখ্যানিকভাবে প্রমাণিত নয়।
ফাউচি বলেন, ‘প্রমাণ করা গেছে যে কোনও একটি ওষুধ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে সক্ষম’এর মানে হলো এখন আমাদের চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে।
বর্তমানে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোনও অনুমোদিত ওষুধ নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কার্যকর ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছে। এরই একটি হলো রেমডেসিভির। গিলিড সায়েন্সেস-এর তৈরি এ ওষুধটি অতীতে ইবোলার বিরুদ্ধে পরীক্ষা করা হলেও তেমন সফলতা মেলেনি।
তবে বিভিন্ন সময়ে পশুর শরীরে চালানো বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, সার্স ও মার্স-এর মতো করোনা প্রজাতির ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এ ওষুধ কার্যকর হতে পারে। তাই এবার করোনা প্রজাতির নতুন ভাইরাস কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের চিকিৎসায় রেমডেসিভির কার্যকর কিনা তা নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ পরীক্ষা চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য সদ্যপ্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক খসড়া প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চীনে চালানো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রেমডেসিভিরের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়নি।
Leave a reply