ভৈরব প্রতিনিধি:
ভৈরবে খাদ্যসামগ্রী নিতে গিয়ে প্রাণ গেলো রোকেয়া বেগম (৫২) নামের এক বিধবা নারীর। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভিড়ের চাপে ওই বিধবা নারীর মৃত্যু হয়েছে। যদিও তার দুই ছেলের বক্তব্য, তাদের মা আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। কীভাবে তিনি মারা গেলেন, তা তারা বলতে পারছেন না।
রোকেয়া বেগমের স্বামীর নাম মৃত অহেদ আলী এবং বাসা শহরের পলতাকান্দা এলাকায়। রোববার বিকাল সাড়ে ৩ টায় পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকার হাজী আসমত প্রাইমারি স্কুল মাঠে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার ৪০০ হতদরিদ্র লোককে খাদ্যসামগ্রী দিতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর আওলাদ হোসেন তার অনুসারীদের নিয়ে স্থানীয় বিত্তবান লোকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে রোববার বিকেলে এলাকার অসহায় দরিদ্রদের খাদ্যসামগ্রী দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এ সময় হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ভিড়ের চাপে এক সময় রোকেয়া বেগম লুটিয়ে পড়েন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ত্রাণ কার্যক্রমে সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। দেড় সহস্রাধিক লোককে খাদ্যসামগ্রী দেয়ার আয়োজন হলেও স্থানীয় থানা পুলিশ বিষয়টি অবগত ছিল না।
তবে নিহতের সন্তান আল-আমিন ও ইয়ামিন বলেন, মা আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। ঘটনার সময় কীভাবে মারা গেল আমরা বলতে পারছি না। এখন অভিযোগ করে আর কী হবে?
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর আওলাদ হোসেন জানান, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে অসহায় কর্মহীন মানুষকে বাঁচাতে গিয়েই আমি বিত্তবানদের কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায় করি। আজ ১ হাজার ৪০০ লোকের মধ্য খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। প্রত্যেককে ৮ কেজি চাল, তিন কেজি আলু ও ২ কেজি ডাল দেয়া হয়। ঘটনার সময় রোকেয়া বেগম মাথা ঘুরে পরে যায়। এই মহিলা আগেই অসুস্থ ছিল বলে তিনি দাবি করেন। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠালে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
কাউন্সিলর আওলাদের বড় ভাই ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা সুলাইমান জানান, প্রায় ৭ লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মহিলার মৃত্যুর খবরে আমি মর্মাহত। মানুষের উপকার করতে গিয়ে এখন আমাদের বদনাম হয়ে গেল।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার সুমাইয়া জানান, রোকেয়া বেগম নামের এক মহিলাকে কয়েকজন লোক হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। কিন্ত তিনি আগেই মারা গেছেন। ঠিক কী কারণে মারা গেছেন সেটা আমি বলতে পারব না। তার লাশ পরিবারের সদস্যরা তৎক্ষণাৎ নিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা জানান, বিষয়টা দুঃখজনক। কাউন্সিলর আমাকে বলেছিলেন আজ এলাকার অসহায় মানুষেরর মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করবেন। এত লোকের সমাগমের কথা আমাকে বলা হয়নি।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহিন জানান, দেড় হাজার মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হলো কিন্তু পুলিশকে তারা অবহিত করেননি। খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কথা আমি জানতাম না। কী কারণে মহিলা মারা গেলেন তা আমি জানি না। তবে মহিলার পরিবারের কেউ অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a reply