ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ। ঘটনাস্থল ফিলিস্তিনের রামাল্লার নবি সালেহ গ্রাম। শোকবিহবল ফিলিস্তিনি তরুণী নূর তামিমি তার চাচাতো ভাই মোহাম্মদ তামিমির বাড়ির উঠোনে বসে ছিলেন। কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে খবর পেয়েছেন মোহাম্মদকে গুলি করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। মাথায় লাগা গুলির আঘাত গুরুতর। মারাও যেতে পারে তার ১৫ বছর বয়সী ছোট ভাইটি।
এর মাঝেই সেই বাড়িতে হানা দেয় কয়েকজন সৈন্য। ছোট ভাইকে গুলি করেছে, আবার এখন এসেছে বাড়িতে অভিযান চালাতে! ইসরায়েলি সৈন্যদের দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারেন নি নূর। হনহন করে এগিয়ে যান অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী সেনা সদস্যদের দিকে। তারপর কেউ কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই গালে চড় বসিয়ে দেন দুই সৈন্যের! সাথে সাথে এগিয়ে আসে ছোট বোন আহেদ তামিমিও। দুই বোন মিলে বেশ কয়েকবার চপেটাঘাত করেন হানাদারদের মুখে। ঘটনাস্থলে অনেকে ক্যামেরা নিয়ে থাকায় আপাতত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি সৈন্যরা।
এই ঘটনার পরপরই নূর, আহেদ এবং আহেদের মাকে গ্রেফতার করা হয়। ইসরায়েলি কারাগারে এখনও আহেদ এবং তার মা এখনো আটক থাকলেও ষোলদিন কারাভোগের পর মুক্ত হয়েছেন নূর তামিমি। ফিলিস্তিনি মিডিয়ার কল্যাণে জাতীয়বীরের সম্মান পাচ্ছেন দু‘বোন। তাদের সাহসিকতা নিয়ে রচিত হয়ে গেছে ডজনেরও বেশি গান।
মুক্তি পাওয়ার পর ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ নূরের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন তিনি সৈন্যদের গালে চড় মেরেছিলেন। জবাবে ২১ বছরের এ তরুণী বলেন, “আমি তাদেরকে আমার বাড়ির আঙিনা থেকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম”।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি শাস্তি পাবার মত কিছু করেছেন বলে মনে করেন কীনা? জবাবে নূর বলেন, “না, আমি এ কাজের জন্য মোটেই দুঃখিত বা লজ্জিত নই। তারা আমাদের ঘর-বাড়িতে হামলা করছে। ইসরায়েলি সৈন্যরাই তো তারা দখলদার।”
সাংবাদিক নূরকে আরও জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কি আবার এরকম করবেন।” দৃঢ় কণ্ঠে এই তরুণীর জবাব, “আবার যদি তারা হামলা করে, আমি আবারও তাদেরেক থাপড়াবো।”
Leave a reply