সুন্দরবনের এই সময়ের সবচেয়ে বড় ত্রাস- বড় ভাই বাহিনী। বনের খাল-নদী তো বটেই, সাগরের জেলেদের কাছেও আতংকের আরেক নাম এই বনদস্যু বাহিনী। দুর্ধর্ষ এই দস্যুরাই আত্মসমর্পণ করতে চায়! ফিরে আসতে চায় স্বাভাবিক জীবনে। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মোহসীন-উল হাকিম।
বড় ভাই বাহিনী যমুনা টিভির মধ্যস্থতায়ই আত্মসমর্পণ করতে চায়- এমন আগ্রহের কথা জানিয়েছে তারা। শিগগিরই অবৈধ অস্ত্র-গুলি জমা দিতে চান সরকারের কাছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এমটি হলে আতংক কমবে। নিরাপদ হবে সুন্দরবন উপকূল।
বড় ভাই বাহিনীর প্রধানের নাম ওহিদ। জীবনের ২৮ বছরই তার সুন্দরবনে কেটেছে দস্যুতা করে। ওহিদ বলেন, “এ জীবনটা যে কেমন, তা আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না। কত কষ্টে বা কত যন্ত্রণায় আমরা আছি।”
এ ধরনের জীবনে কেন আসছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে দস্যু বাহিনীর প্রধান বলেন, “যে কোনো কারণে এসেছে পড়েছি। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা থাকলেও সেই উদ্যোগ সফল হয়নি।” তবে এবার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে আত্মসমর্পণের জন্য এগিয়ে এসেছেন ওহিদ।
তিনি বলেন, “মোহসীন ভাই আপনি আগেও এসেছেন, আপনার সঙ্গে কথা বলেছি। আপনার সঙ্গে পরিচয় আছে। যেহেতু আমি দাওয়াত দিয়েছি, আপনি এসেছেন। খুব আনন্দ লাগতেছে। আমাদের সদস্য যারা আছে সবাইকে নিয়ে আপনার ডাকে সাড়া দিচ্ছি। সবকিছু (অস্ত্র) সরকারকে বুঝিয়ে দিয়ে আমি ভালোভাবে ভালো জীবনে সবাইকে নিয়ে থাকবো।”
বাহিনীর এক সদস্য বলেন, “ভালোর পথে চলে যেতে চাই, অন্ধকার জগতে আর আমরা থাকবো না। সবাই কোনো না কোনো কারণে এখানে এসেছে। কেউ ভুলে আসছে, কেউ বিপদে পড়ে আসছে। কেউ দেশের পরিস্থিতির শিকার হয়ে এই পথে আসছে। এখন আমরা সবাই ফিরে যেতে চাই।”
অপর এক সদস্য বলেন, “আমাদের যদি স্থিরভাবে থাকতে দেয়, তবে আমরা অবশ্যই ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবো, এবং এই পথে আর আসবো না।”
মোহসীন-উল হাকিমের উদ্দেশে অন্য আরেকজন বললেন, “সবচেয়ে ভালো লাগতেছে, আপনি এসেছেন। সরকার আমাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এখানে একটা দিন যেন একটা মাসের মতো মনে হচ্ছে। যত দ্রুত চলে যেতে পারলে বাঁচি।”
“মন চাইছে আপনার সাথেই আমরা এ জীবন ছেড়ে চলে যাই”- মনের এমন ভাব প্রকাশ করেন এক দস্যু। এর প্রেক্ষিতে যমুনা টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, “আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলবো, এবং আপনাদের এখান থেকে নিয়ে যাওয়া ব্যবস্থা করবো।”
এর আগে সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি কুখ্যাত দস্যু বাহিনী যমুনা টিভি’র হাত ধরেই স্বাভাবিক জীবনে এসেছে। এবার বড় ভাই বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে সুন্দরবন ঘেঁষা সাগর দস্যুমুক্ত হবে। তবে নতুন করে আবারও বড় দস্যু বাহিনী যাতে তৈরী না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
Leave a reply