করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার বেড়েছে ১৪ দশমিক সাত শতাংশ। গত এপ্রিলেই দুই কোটি পাঁচ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছেন।
১৯৩০ সালের মহামন্দার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার এটিই সবচেয়ে বেশি।
মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে গত এক দশকের মধ্যে এই প্রথম মার্কিন প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। খুচরা বিক্রিতেও ধস নেমেছে।
মাস দুয়েক আগেও মার্কিন বেকারত্বের হার ছিল তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ। যেটা গত ৫০ বছরে সবচেয়ে কম ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এরিক গ্রোসহেন বলেন, ঐতিহাসিকভাবে এটা নজিরবিহীন ঘটনা। মহামারি থেকে মুক্তি পেতে আমাদের অর্থনীতিকে চিকিৎসাপ্রণোদিত কোমায় নিয়ে গেছি।
তিনি বলেন, এতে লোকজন মারাত্মকভাবে চাকরি খুইয়েছেন, যে দৃষ্টান্ত আধুনিক ইতিহাসে দেখা যায়নি।
অর্থনীতির প্রতিটি খাতেই কর্মসংস্থানের সংখ্যা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সবচেয়ে বেশি আঘাত লেগেছে অবকাশ ও আতিথেয়তা বিভাগে, যেখানে ৭৭ লাখ বা ৪৭ শতাংশ পেরোল কমে গেছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে কমেছে ২৫ লাখ পদ, আর খুচরা বিক্রেতা খাতে ২১ লাখ পদ হারিয়েছে।
শ্রমবিভাগ বলছে, তাদের তিন-চতুর্থাংশের বেশি কর্মহীন। তাদের সাময়িক অব্যাহতি দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। বর্তমানে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তারা প্রত্যাশা করে আছেন— অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যবসা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসছে এই মহামারি। যেমন একটি রেস্তোরায়ঁ এক সঙ্গে কত লোক ঢুকতে পারবেন, সেই সংখ্যা উল্লেখ করে দেয়া হবে। এতে কর্মীদের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে।
তারা বলেন, আর লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে এই ব্যবসা টিকে থাকতে পারবে না।
কার্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গ্রোসহেন বলেন, যদি ব্যবসাগুলো টিকে থাকতে না-পারে কিংবা ব্যবসার ধরনে এমন নাটকীয় পরিবর্তন আনতে হয়— যাতে নতুন ধরনের ও সংখ্যায় কর্মী নেয়া লাগতে পারে— তখন সাময়িক কর্ম অব্যাহতিও একটা সময়ে গিয়ে স্থায়ী রূপ নিতে পারে।
কেবল যুক্তরাষ্ট্র-ই যে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে, তা নয়। ইতিহাসে সবচেয়ে তীব্র মন্দার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। শুক্রবার কানাডা বলছে, সেখানে বেকারত্বের হার পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ বেড়েছে।
দেশটির পরিসংখ্যান দফতর বলছে, কর্মশক্তির এক তৃতীয়াংশ হয় কর্মস্থলের বাইরে কিংবা তাদের নিয়মিত ঘণ্টার অর্ধেকেরও কম সময় কাজ করছেন।
তবে ফক্স নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে দুই কোটি পাঁচ লাখ লোকের বেকারত্বের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।
বেকারত্বের সংখ্যা প্রকাশের পর তিনি বলেন, এমনকি এ জন্য ডেমোক্রেটিকরাও আমাকে দায়ী করছেন না। এখন আমি কি করতে পারি, আমি এটাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারি।
কে ক্রু ও নেইম্যান মারকাসের মতো খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে দেউলিয়া হওয়ার দাবি করেছে। তেলের চাহিদা ও দাম কমায় অনেক জ্বালানি কোম্পানিরও একই অবস্থা।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাজ্য তাদের বিধিনিষেধ শিথিল করার দিকে যাচ্ছে। তবুও অর্থনীতি সচল করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। কর্মীরা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়ও একটা প্রভাব পড়বে।
নিউইয়র্কের একটি আইনি ফার্মের কর্মী তানিয়া নিকোলাভস্কিয়া বলেন, কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিশ্চিত বলতে পারছি না।
মার্চে বাড়ি থেকে কাজ করার পর বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছেন। বললেন, স্বপ্নের চাকরিতে ফিরতে পারবেন আশা নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য ভালো না থাকায় হতাশাও কাজ করছে।
এছাড়া স্কুল বন্ধ থাকায় আট বছর বয়সী কন্যাকে নিয়েও আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে তাকে।
Leave a reply