করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পুরো পৃথিবী। সাত মহাদেশের এ গ্রহে একমাত্র করোনামুক্ত মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। পৃথিবীর বাসিন্দারা কীভাবে দিন কাটাচ্ছে, প্রিয় গ্রহে কী ঘটছে- তা দেখতে উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন অ্যান্টার্কটিকার বাসিন্দারা। হিমশীতল এ মহাদেশে স্থায়ী বাসিন্দা না থাকলেও হাজার পাঁচেক বিজ্ঞানী ও গবেষক বসবাস করেন। তারা উদ্বেগভরা কণ্ঠে জানাচ্ছেন, আমাদের অবস্থা এখন চাঁদে থাকা নভোযাত্রীর মতো। আমরা দূর থেকে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু কিছুই করার উপায় নেই। খবর সিএনএনের। পৃথিবীর সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত অ্যান্টার্কটিকা, যা একই সঙ্গে এ গ্রহের শীতলতম স্থান। করোনাভাইরাসের কোনো সংক্রমণ এখনও সেখানে পৌঁছায়নি। শুরুতে অবশ্য ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি দেখা গিয়েছিল। মেরু অঞ্চলের শেষ গ্রীষ্মে পর্যটকদের নিয়ে আসা একটি ক্রুজশিপে ওই সময় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
সৌভাগ্যের বিষয় হল ভাইরাসটি অ্যান্টার্কটিকার বরফজমাট তীরে হানা দিতে পারেনি। আর এখন মেরু অঞ্চলের ছয় মাসব্যাপী দীর্ঘ শীত আর রাত্রির পালা নামছে, ফলে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকবে এ সময়টা। সংক্রমণের ঝুঁকিও তাই নেই বললেই চলে।
মহাদেশটি নিরাপদ থাকার আরেক কারণ হল- বৈরী জলবায়ুর কারণে এখানে স্থানীয় কোনো মনুষ্য বসতি নেই। স্থানীয় বাসিন্দা বলতে আছে পেঙ্গুইন, তিমি, সিল আর আলবাট্রোস নামক পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ ডানার পাখির দল। তাদের সঙ্গেই বসবাস করেন পাঁচ হাজার বিজ্ঞানী ও গবেষক। তারা অ্যান্টার্কটিকায় নানা দেশের ৮০টি ঘাঁটিতে বসবাস করছেন। অ্যান্টার্কটিকার সর্ব উত্তরে মার্কিন গবেষণা কেন্দ্র পালমার স্টেশন। সেখানকার প্রশাসনিক কর্মকর্তা কেরি নেলসন বলেন, এখানে অবস্থান করে নিরাপদ থাকায় সবাই নিজ ভাগ্যের প্রতি কৃতজ্ঞ। এর বিপরীত অনুভূতি কারও মধ্যে হচ্ছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। সিএনএন।
ট্র্যাভেলকে পাঠানো ই-মেইলে তিনি বলেন, এরপরও কিছু কিছু লোক বাড়ি ফিরতে চান। তারা যাদেরকে ভালোবাসেন, এই বিপদের দিনে তাদের সাহায্য করতে চান পাশে থেকে। অন্যরা ইতিহাসের এ দুঃসময়ে নিজেদের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীর মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন। ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও কেরি নেলসন এবং তার ঘাঁটির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা চলমান বিশ্ব মহামারীর ওপর সতর্ক নজর রাখছেন। কেরি বলেন, অ্যান্টার্কটিকায় কাটানো একটি মৌসুম নাকি মানুষকে আমূল বদলে দেয়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমাদের চাইতেও বেশি বদলে যাবে বাকি পৃথিবী। মহাদেশটির আরেক অস্থায়ী বাসিন্দা রবার্ট টেইলর। তিনি অ্যান্টার্কটিক উপসাগরের পশ্চিম তীরের অ্যাডেলেইড দ্বীপে অবস্থিত ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক জরিপ ঘাঁটি রথেরা স্টেশনে থাকেন। ২৯ বছরের এ স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা একজন ফিল্ড গাইড। তিনি বলেন, ছয় মাস আগে আমি যখন প্রথম অ্যান্টার্কটিকা আসি, চীনে একটি নতুন ভাইরাস ছড়িয়েছে- এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হতে থাকে। যুক্তরাজ্যেও সীমিত আকারে সংক্রমণ ছড়ায়। তখন ভেবেছিলাম এটা খুব নগণ্য। তবে করেনার ভয়াবহতা হতাশ করেছে আমাকে।
Leave a reply