৯৯৯ নম্বরে ত্রাণ চুরির ১৭৭ অভিযোগ

|

দেশে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গরির-দুস্থদের জন্য সরকার প্রদত্ত সহায়তা জনপ্রতিনিধি কর্তৃক চুরি অন্যতম আলোচিত বিষয়। যা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমেও উঠে এসেছে।

গত ২৩ দিনে বাংলাদেশ পুলিশ পরিচালিত এ নম্বরে ত্রাণ চুরির ১৭৭টি অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে দেড় শতাধিক ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে ৯৯৯-এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেক কল পাচ্ছি। এর মধ্যে বেশির ভাই কলারই ত্রাণ চাচ্ছেন। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের তথ্য। এসব ফোন পাওয়ার পর বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। জড়িত অনেককেই আইনের আওতায়ও আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, ত্রাণের জন্য করলে ৯৯৯ অফিসে বসে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না যে তাদের ত্রাণের প্রয়োজন আছে কিনা। এ কারণে আমরা কলগুলো সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, জেলার এসপি ও উপজেলার ইউএনওদের কাছে ট্রান্সফার করছি। তারা যাচাই-বাছাই করে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে ৩৩৩ তেও কল ট্রান্সফার করা হচ্ছে।

জাতীয় জরুরি সেবার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ৯৯৯-এ আসা ত্রাণ দুর্নীতির অভিযোগগুলোর মধ্যে দেড় শতাধিক ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তারা অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি। এদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার অনেককে জরিমানা করে সতর্ক করা হয়।

জাতীয় জরুরি সেবার পরিদর্শক অনোয়ার সাত্তার জানান, করোনা পরিস্থিতিতে কলারের বেশির ভাগই করোনা নিয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানায়। পাশাপাশি তারা সবাই ত্রাণের জন্য পুলিশ সদস্যদের সহায়তা চান। রোজার আগে কলারের সংখ্যা বেড়ে যায়। খাবার চেয়ে অনেকে কান্নাকাটিও করেন।

এমন পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনায় এ ধরনের কলগুলো সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কাছে ট্রান্সফার করা হয়। এরপর থানার ওসিরা নীরবেই এসব ব্যক্তির ঘরে ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। কিছু স্থানে ওসিদের কাছে ত্রাণ না থাকায় এ ধরনের কলগুলো ইউএনওদের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আবার অনেক কলের গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলার এসপিদের কাছেও পাঠানো হচ্ছে। জেলার এসপিরা তাদের ঠিকানা সংগ্রহ করে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করছেন।

জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল ১৩টি স্থান থেকে সাধারণ মানুষ ত্রাণ দুর্নীতির অভিযোগে ফোন করেন জাতীয় জরুরি সেবায়। এর আগের দিন অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল ৭টি স্থান থেকে ত্রাণ চুরির অভিযোগ আসে। ২৭ এপ্রিল অভিযোগ আসে ১০টি স্থান থেকে।

২৪ এপ্রিল ১১টি, ২৩ এপ্রিল ২০টি, ২২ এপ্রিল ৩২টি এবং ২১ এপ্রিল ২৭টি স্থান থেকে রিলিফ চুরির অভিযোগ আসে ৯৯৯ কর্তৃপক্ষের কাছে। ৯৯৯-এ কেবল ত্রাণ চুরির অভিযোগেই ফোন করা হচ্ছে না। ত্রাণ চেয়েও আসছে অসংখ্য ফোন। গত ২৩ দিনে আট হাজার ২৯২টি কল এসেছে ত্রাণ চেয়ে। এ মধ্যে সবচেয়ে বেশি কল এসেছিল ২২ এপ্রিল।

এদিন ত্রাণ চেয়ে কল করেন এক হাজার ৩৩২ জন নাগরিক। লকডাউন শিথিল করার পর ত্রাণ চেয়ে ফোন করার ঘটনা কমছে। ১৩ মে এ ধরনের কল ছিল ৮৪টি। ১২ মে ৬৪টি, ১১ মে ১০০টি, ১০ মে ৮৯টি, ৯ মে ১০০টি, ৮ মে ১০০৩টি এবং ৭ মে ত্রাণ চেয়ে ১৫১টি কল করা হয়। ত্রাণ চেয়ে ২১ এপ্রিল ৬৮৪টি, ২৩ এপ্রিল ৯১৬টি, ২৪ এপ্রিল ৬৯০টি, ২৫ এপ্রিল ৪২৪টি, ২৬ এপ্রিল ৪৬৩টি, ২৭ এপ্রিল ৪৯০টি, ২৮ এপ্রিল ৪৪২টি, ২৯ এপ্রিল ৪৬১টি এবং ৩০ এপ্রিল ৩৫৫টি কল করেন নাগরিকরা।

এছাড়া ১ মে ১৯৭ জন, ২ মে ২৮১ জন, ৩ মে ৩২৭ জন, ৪ মে ২২৫ জন, ৫ মে ১৭১ জন এবং ৬ মে ১৪৭ জন কলার এ সংক্রান্ত কল করেছেন। এসব কলের মধ্যে কিছু কল জাতীয় তথ্যসেবা হেল্পলাইন-৩৩৩ কর্র্তৃপক্ষের কাছেও ট্রান্সফার করা হচ্ছে।

দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ৯৯৯-এ কলের সংখ্যা বেড়ে যায়। এরপর মার্চ থেকে ফোন করা শুরু হয় ত্রাণ সহায়তা চেয়ে। এ কারণে গত এপ্রিল থেকে এ বিষয়টি আলাদাভাবে নথিভুক্ত করা শুরু করে ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ।

গত ২১ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত করোনা সম্পর্কিত কল আসেন দুই লাখ ৯৭ হাজার ৫৯৯টি। এর মধ্যে ১৭ হাজার ১৩০টি কলের সেবা দিয়েছে ৯৯৯। দুই লাখ ৮০ হাজার ৪৬৯টি কল যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রেফার করেছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply