পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং জামায়াতে ইসলামির নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা সদরের খেপুপাড়া নেছারুদ্দিন ফাজিল মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা মো. নাছির উদ্দিন।
এ মাদরাসা শিক্ষক তার নিজের আইডি থেকে গত ১৭ এপ্রিল সকাল ১০টা ৪৯ মিনিটে একটি ভিডিওটি শেয়ার করেন। এ নিয়ে মাদ্রাসার গভর্নিং বডি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে এবং গঠন করা হয়েছে ৩-সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি।
‘হঠাৎ সারা দেশব্যাপী খুশির বন্যা। আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছেন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী’ মাদরাসা অধ্যক্ষ নাছির উদ্দিনের ফেসবুক আইডিতে এ শিরোনামে ছিলো ভিডিওটি। শেয়ার করা ভিডিওটি দেখে পাঁচ জন সহমত পোষণ করে মন্তব্য লিখেছেন। এছাড়া ২২ জন ব্যক্তি ভিডিওটিতে লাইক দিয়েছেন।
তিনি যে ভিডিওটি শেয়ার দিয়েছিলেন তার স্কিন শর্ট দেয়া কপি প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে ভিডিওটি মাদরাসা অধ্যক্ষ তার আইডি থেকে সরিয়ে ফেলেন।
বিষয়টি মাদরাসার গভর্নিং বডির নজরে আসলে গত ১২ মে কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ মো. মহিব্বুর রহমানের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে অধ্যক্ষকে ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে এবং কমিটির সদস্য ও সরকারি মোজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ‘র প্রভাষক রেজাউল করিম কেনানকে আহবায়ক করে ৩-সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহবায়ক রেজাউল করিম কেনান জানান, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি এবং তদন্ত শেষ হলে আমরা কমিটির কাছে প্রতিবেদন জমা দেব।
কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ মো. মহিব্বুর রহমান‘র সাথে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য ও সরকারি মোজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ‘র প্রভাষক শাহ আলম খান বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্য প্রতিবেদন ও অধ্যক্ষের শোকজ নোটিশের জবাব পেলেই কমিটির সভা ডাকা হবে এবং ওই সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে, সরকারি বেতন ভুক্ত একজন মাদরাসা শিক্ষকের দ্বারা জামায়াতের বিতর্কিত নেতার ভিডিও শেয়ার করার ঘটনায় কলাপাড়ার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
কলাপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. বদিউর রহমান বন্টিন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামিকে নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও শেয়ার করে অন্যায় করেছেন। মাদরাসার অধ্যক্ষ রাষ্ট্র বিরোধী কাজ করেছেন।’
এ নিয়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. নাছির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মোবাইল ভালো চালাতে পারিনা সম্ভবত আমার ছেলেমেয়েদের কেউ আমার অজান্তে এটি শেয়ার করেছিল। এটা আমার ভুল হয়েছে। ধৃষ্টতা হয়েছে। আমার এ কাজের জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’ তিনি আরও জানান, শোকজ নোটিশের জবাব প্রস্তুত করে রেখেছি কিন্তু সংসদ সদস্য মহোদয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকায় তাকে দিতে পারিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাছির উদ্দিন গত বছরের ৩০ নভেম্বর খেপুপাড়া নেছারুদ্দিন ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর তিনি নবনিযুক্ত অধ্যক্ষের পদে ১ ডিসেম্বর যোগদান করেন। এর আগে তিনি আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কুতুবপুর ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং জামায়াতে ইসলামির নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি পোস্ট দেয়ার কারণে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের যোবাইদিয়া মহিলা মাদরাসার অধ্যক্ষ নুরুল কবির নামের এক মাদরাসা অধ্যক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে তাকে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হয়।
Leave a reply