আজ থেকে চালু হচ্ছে অ্যাপ ভিত্তিক সিএনজি সেবা ‘হ্যালো’

|

‘অনেক্ষণ ধইরা দাঁড়ায়া রইছি। ওই যে দেখেন না আরও অনেক গাড়ি দাঁড়ায়া আছে, যাত্রী নাই। অথচ ফোনের মাধ্যমে ঠিকই যাইতাছে। আমাগো তো আর ফোনে কোনো যাত্রী নাই।’ অনেকটা আক্ষেপের সুর সিএনজি চালক তৈয়ব আলীর কণ্ঠে। তিনি রাজধানীর একটি পয়েন্টে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তৈয়ব আলীর মতো অনেক সিএনজি চালকের দেখা মিলছে এখন। দিন শেষে মালিকের জমা দিয়ে কিছু টাকা নিয়ে ঘরে যেতে পারবেন কিনা শঙ্কায় থাকেন তারা। অথচ এই রাজধানীতেই সিএনজি মালিক-চালকদের দৌরাত্ম্য বেশি দিন আগের কথা নয়। পরিবহন সংকটের এ নগরীতে তাদের কাছে যাত্রীরা রীতিমতো বন্দি ছিলেন। এ সুযোগে ইচ্ছা মতো ভাড়া আদায় করতেন সিএনজি চালকরা।

সম্প্রতি যাদুর কাঠির মতো ঢাকার রাস্তায় নামে অ্যাপ ভিত্তিক পরিবহন সেবা। প্রাইভেটকার এবং মোটরসাইকেল চালকরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে শুরু করেন যাত্রী পরিবহন। এ সুযোগ করে দেয় উবার, পাঠাও, স্যাম ইত্যাদি নামের কিছু প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত ও সহনীয় মাত্রার ভাড়া আর সহজলভ্যতার কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় ঢাকাবাসীর মাঝে। যাত্রী কমে যায় সিএনজি অটোরিকশার, এবং ভেঙে পড়ে সিন্ডিকেট। চালক-মালিকদের মাথায় হাত। এক পর্যায়ে অ্যাপ ভিত্তিক সেবােগুলো বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটও ডাকেন তারা।

তবে শেষ পর্যন্ত বিরোধিতা থেকে সরে এসে নিজেরাই কবুল করে নিয়েছেন অ্যাপ’কে। আজ (মঙ্গলবার) থেকে চালু হচ্ছে স্মার্টফোন ভিত্তিক সিএনজি সেবা ‘হ্যালো’। মনে করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে ভাড়ার পরিমাণ ও গন্তব্য নিয়ে চালক-যাত্রী বাকবিতণ্ডার অবসান হবে। বিআরটিএ- বলছে, এটি ভাল উদ্যেগ।

হ্যালো অ্যাপস এবার সিএনজিগুলোকে অনলাইনের আওতায় আনছে। বিআরটিএ’র বেঁধে দেয়া ভাড়ার হার মেনে চলা হবে। অর্থাৎ, প্রথম দুই কিলোমিটার ৪০ আর পরের প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা। প্রতি মিনিটের ওয়েটিং চার্জ ধরা হয়েছে ২ টাকা।

‘হ্যালো’ এর বিপণন বিভাগের পরিচালক রাকিবুল হাসান জানান, অ্যাপস ব্যবহারের জন্য শতকরা ১৫ টাকা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে। তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার থেকে গুগল অ্যাপস স্টোরে ‘হ্যালো’ অ্যাপটি পাওয়া যাবে।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বেশিরভাগ সিএনজি চালকের স্মার্টফোন নেই, বা থাকলেও ভাষাগত কারণে অ্যাপের ব্যবহার নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন। আবার মালিকের জমার বাইরে ১৫ টাকা হারে চার্জ দেয়াও বড় চ্যালেঞ্জ তাদের জন্য। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রাথমিকভাবে সফল হলে ধীরে ধীরে চালকরা স্মার্টফোনের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব সাখাওয়াত দুলাল বলেন, প্রাথমিকভাবে পাঁচ শতাধিক চালককে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যারা এই সেবায় আসতে চাইবেন তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সাখাওয়াত দুলাল মনে করছেন, এই সেবার সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, চালকদের মাধ্যমে যাত্রীর এবং মালিকদের মাধ্যমে চালকদের হয়রানির শিকার হওয়ার সুযোগ নেই।

বিআরটিএ বলছে, এটা যদি ভালভাবে চলে তাহলে যাত্রীরা উপকার পাবে। এটা আইন-স্বীকৃত। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহবুব ই রব্বানী বলেন, সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার হার মেনে সিএনজি অ্যাপ দিয়ে চলতে পারলে সেটি তো খুবই ভাল।

এর আগেও বেশ কয়েকটি কোম্পানি সিএনজিগুলোকে অ্যাপসের আওতায় আনতে চেয়েও সফল হতে পারেনি। তবে এবার আয়োজকরা আশাবাদী। সাথে আশাবাদী যাত্রী-চালকরাও।

যমুনা অনলাইন: কিউএস/টিএফ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply