করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে এর চিকিৎসার সকল দায়িত্ব সরকারকেই নেয়ার দাবি জানিয়েছে ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপল’স হেলথ নামের একটি সংগঠন। প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালসমূহকে রিকুইজিশন করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহ্বান তাদের।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ আরও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের দাবি জানিয়েছে তারা। ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপল’স হেলথের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা.শাকিল আখতার প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সঠিকভাবে লকডাউন কার্যকর না হওয়ায় সারা দেশে সর্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর সামাজিক সংক্রমণ ঘটে গেছে। জুন মাস আমাদের জন্য একটি কঠিন সময়। বিশেষজ্ঞগণ শঙ্কিত যে এ মাসে এ রোগে ব্যাপক প্রাণহানি হতে পারে। সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে যদিও তা অত্যন্ত অপ্রতুল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা পারস্পরিক সাংঘর্ষিক।
তাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় মেটাতে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এই দুর্যোগ মোকাবেলার প্রথম ধাপে প্রধান ভূমিকা যে খাতের, সেই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ অতি নগন্য। প্রথমদিকে সরকারি পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখে দিয়ে পরে কিছু বেসরকারি হাসপাতালকে এই পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা গরীব জনসাধারণের সাধ্যের বাইরে। উপরন্ত এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা ও সমন্বয় না থাকায় চিকিৎসায় হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসার সঠিক দিকনির্দেশনা (গাইডলাইন) চিকিৎসকদের কাছে এখনো পৌঁছানো হয়নি।
ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপল’স হেলথের দাবিগুলো হলো-
১. অবিলম্বে কোভিড-১৯ কে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করে এর চিকিৎসার সকল দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল সমূহকে রিকুইজিশন করে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আরও চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মী দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।
২. একযোগে সারা দেশব্যাপী কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণযুক্ত রোগী খুঁজে পরীক্ষার জন্য অবিলম্বে মানসম্মত র্যাপিড টেস্ট কিট (সায়েন্স ল্যাবরেটরি/গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত অথবা এন্টিজেন/এন্টিবডি নির্ণয় টেস্ট কিট)অবমুক্ত করতে হবে।
৩. বর্তমানে চলমান লকডাউন আরও দৃঢ়ভাবে আরও কিছুদিন (সংক্রমণ কমা শুরু না হওয়া পর্যন্ত) চালু রাখতে হবে। লকডাউন তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠান সমুহকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিতে হবে। লকডাউন চালু রাখার সময় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও চিকিৎসা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী (কমিউনিটি ক্লিনিক সহ) এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের যুক্ত করে ‘করোনা স্ক্রিনিং টিম’ গঠন করে পাড়া-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা রোগের লক্ষণযুক্ত রোগী খুঁজে বের করা, পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করার কাজে লাগাতে হবে।
৫. প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকৃত রোগীদের দ্রুত আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় স্টেডিয়াম, মিলনায়তন, কমিউনিটি সেন্টার, বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে আসা বা সন্দেহভাজন রোগীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টাইন/আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. করোনা রোগী চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও নিরাপত্তাকর্মীসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কর্মীদের নিজ গৃহে ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ও খাবারের সুব্যবস্থা করা এবং কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতে পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা এবং প্রতিটি হাসপাতালে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে তাদের জন্য মানসম্পন্ন ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা আবরণী (পিপিই) নিশ্চিত করতে হবে।
৭. সরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সরকার ঘোষিত ঝুঁকি বীমা ও ভাতার ক্ষেত্রে বেসরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার সমস্ত দায়ভার রাষ্ট্র বহন করবে ও এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যখাতের কারও মৃত্যু হলে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
Leave a reply