ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ ক্রিম থেকে অবশেষে উঠতে চলেছে ফেয়ার শব্দটি। উচ্ছ্বসিত সোশ্যাল মিডিয়া। বিপাশা বসু, রিচা চাড্ডাসহ ‘কালো মেয়েরা ইনস্টাগ্রামে আবেগে ভাসছেন। আর এসব দেখে আড়ালে মুখ টিপে হাসছেন নেটিজেনের একাংশ।
কিন্তু কেন? আসলে ‘সুন্দর’ হওয়ার জন্য বলিউডের অনেকেই যে স্কিন লাইটেনিং অপারেশন করিয়েছেন, তা জানেন অনেকেই। বলিউডে গায়ের রঙই কি তবে যোগ্যতার মাপকাঠি! প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
কালো থেকে রাতারাতি ফর্সা হওয়ার দৌড়ে নাম লিখিয়েছিলেন কোন কোন বলিউড তারকা, তাদের একবার দেখে নেওয়া যাক।
শ্রীদেবী: দক্ষিণী এই অভিনেত্রীর জলবায়ুগত কারণেই দুধে আলতা রং ছিল না কোনও দিনই। তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকের ছবিগুলি দেখলেই খানিক বোঝা যায়। যতদিন এগিয়েছে শ্রীদেবীর গায়ের রংও বদলেছে সঙ্গে সঙ্গে। শোনা যায়, ফর্সা হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন তিনিও। শ্রীদেবী নিজে কখনও তা স্বীকার করেননি।
রেখা: পুরুষ হৃদয়ে হিল্লোল তোলা এই অভিনেত্রী এভারগ্রিন। তার কারিশমায় মুগ্ধ আট থেকে আশি বছরের মানুষ। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির ভিতরের খবর হচ্ছে, ফর্সা হওয়ার অমোঘ আকর্ষণ নাকি উপেক্ষা করতে পারেননি তিনিও। রেখার প্রথম দিকের ছবি এবং পরের ছবিগুলির মধ্যে তুলনা করলে স্পষ্টতই গায়ের রঙের পার্থক্য চোখে পড়বে। সাহসী, বলিষ্ঠ সব সময় নিজের শর্তে চলা এই মানুষটিরও নিজের আসল গায়ের রং ঢাকতে হয়েছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে? এ নিয়ে মুখ খোলেননি রেখাও। তবু চোখকে তো আর অবিশ্বাস করা যায় না।
কাজল: ফিল্মি পরিবার থেকে উঠে আসা কাজল নিজের অভিনয়ের দক্ষতার জোরে খুব সহজেই ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তার কালো রং, জোড়া ভুরু আর সাবলীল অভিনয়ই ছিল তার সম্পদ।কিন্তু ‘কাভি খুশি কাভি গম’ ছবি থেকেই কাজলকে দেখা যায় আগের থেকে অনেকটাই ফর্সা হয়ে গিয়েছেন।
কীভাবে এটা হলো জানতে চাইলে কাজলও বলেছিলেন, একেবারেই নয়। মেকআপের জন্য হয়তো এমনটা মনে হয়েছে। কাজলের কামব্যাক ছবি ‘দিলওয়ালে’তে তার লুক কিন্তু বলছিল অন্য কথা।
দীপিকা পাডুকোন: বলিউডে নায়িকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পান তিনিই। তার ফ্যান-ফলোয়ারের সংখ্যা আকাশছোঁয়া। বারেবারেই নিজেকে সুদক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। কিন্তু বলিপাড়ার ভিতরে গুঞ্জন, সিনিয়রদের দেখানো পথেই নাকি হেঁটেছেন এই সুন্দরী।
তবে দীপিকা এটা মানতে চাননি, তার মডেলিং জীবনের ছবি আর এখনকার ছবির মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। নিজের বক্তব্যকে স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা দীপিকাও কী এই ফর্সা হওয়ার মোহ থেকে বের হতে পারলেন না, প্রশ্ন অনুরাগীদের।
বিপাশা বসু: ইনস্টাগ্রামে ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ ক্রিম থেকে ‘ফেয়ার’ কথাটি উঠে যাচ্ছে দেখে আবেগতাড়িত হয়ে একটি পোস্ট করেছেন বিপাশা। কীভাবে তার সেক্সিনেসকে রঙের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে বলিউড তার গায়ে ‘ডাস্কি’ লেবেল সেঁটে দিয়েছিল, তা নিয়ে সরব হয়েছেন তিনিও। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, বিপাশা নিজেও কিন্তু বলিউডের এই দ্বিচারিতার শিকার। স্কিন লাইটিনিং করিয়েছেন তিনিও। ফর্সা হতে চেয়েছেন তিনিও! অন্তত বলিউডের গুঞ্জন তেমনই বলে।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া: সারা বিশ্ব আজ চেনে তাকে। একদা মিস ওয়ার্ল্ড প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার এখনকার লুক আর আগের লুকের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। অনেকেই বলেন, নোজ জব করিয়েছেন তিনি। আর স্কিন লাইটনিং? সে দিকেও নাকি হাত বাড়িয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শুধু নায়িকারাই যে ফর্সা হওয়ার এই পন্থা বেছে নিয়েছেন তা ভাবা কিন্তু একেবারেই ভুল। দক্ষিণী তারকা রজনীকান্ত, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীও নাকি হেঁটেছেন একই পথে। কিন্তু কেন? যা স্বাভাবিক, যা নিজস্ব তা নিয়ে বলিউডের এতো গোঁড়ামি কেনও? ‘ফেয়ার’ কথাটা উঠলো ক্রিম থেকে। মানুষের মনে সৌন্দর্যের সংজ্ঞাও কি বদলাবে এবার? প্রশ্ন সেখানেই।
ইউএইস/
Leave a reply