মধ্যরাতের আগুনে নিঃস্ব টিটিপাড়া বস্তির ৩০ পরিবার

|

রাজধানীর কমলাপুরের টিটিপাড়া বস্তির বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম। মানুষের কাছে হাত পেতেই চলে তার সংসার। এর উপর একমাত্র ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় নিয়তি মেনেই নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাতে ঘুমাতে যাবার আগেও হয়ত মনোয়ার বেগম ভাবেননি মধ্যরাতে নিয়তির নির্মম পরিণতি এভাবে দেখতে হবে!

ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ততক্ষণে পুড়ে ছাই ভিক্ষা করে জমানো ১০ হাজার টাকা। কোনরকমে ২০ বছরের একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলেকে রক্ষা করতে পারলেও হুইল চেয়ারটি আর রক্ষা করতে পারেননি।

গতকাল রাত দেড়টার দিকে যখন কমলাপুরের টিটিপাড়া বস্তিতে আগুন লাগে, তখন গভীর ঘুমে বস্তির বাসিন্দারা। আগুন লাগার খবর শুনে যে যেভাবে পেরেছেন বাইরে বের হয়ে এসেছেন। এতে হয়তো হতাহতের ঘটনা এড়ানো গেছে; কিন্তু বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটুকু রক্ষা করতে পারেননি কেউ। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ততক্ষণে ছাই বস্তির ৩০ টিরও বেশি ঘর। সেইসাথে পুড়ে অঙ্গার হতভাগ্য মানুষগুলোর স্বপ্ন।

করোনা দুর্যোগের মধ্যে সব হারিয়ে এখন দিশেহারা হতদরিদ্র এই মানুষগুলো। কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। যেমনভাবে বুঝে উঠতে পারছেন না আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ বছরের রিজিয়া বেগম। একদিকে সব হারিয়ে নিঃস্ব, অন্যদিকে মাথায় ঝুলছে ঋণের কিস্তির বোঝা। ভবিষ্যৎ চিন্তা করে পুড়ে যাওয়া অবশিষ্ট চেয়ারটি আকড়ে দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না এই বৃদ্ধা।

শুধু মনোয়ারা বেগম বা রিজিয়া বেগমই নন; বস্তির প্রায় সবার অবস্থাই এক। তারা বলছেন, করোনার দুর্যোগ না থাকলে হয়ত ঘুরে দাঁড়ানো যেত। কিন্তু বস্তির সবাই দিনমজুর হওয়ায় এবং কোন কাজ না থাকায় এমনিতেই বিপাকে আছেন। তার উপর মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আগুনে নিঃস্ব সবাই। তবে সরকার কিছুটা সহযোগিতা করলে তারা হয়ত খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে পারবেন বলে জানান।

তবে আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর দেবাশীষ বর্ধন জানান, রাত দেড়টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply