বাংলাদেশের পাওনা ১১.৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ২৬ বছর ধরে আটকে রেখেছে উত্তর কোরিয়া। যার পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯৯ কোটি টাকা। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সামগ্রী কিনেও এই টাকা পরিশোধের জন্য এখনো কোনো উদ্যোগ নেননি দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। এ খবর দিয়েছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৪ সালে কেনা বিভিন্ন সামগ্রীর জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছে ১১.৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৯৯ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা আছে বাংলাদেশের। পাওনা টাকা আদায়ে চীনের বেইজিংয়ে বাংলাদেশি দূতাবাস উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
২৬ বছর আগে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বার্টার চুক্তির আওতায় এসব পণ্য আমদানি করে উত্তর কোরিয়া। এসব পণ্যের জন্য কমপক্ষে ১১.৬২ মিলিয়ন ডলার ঋণী তারা।
ওই চুক্তির আওতায় উত্তর কোরিয়া বাংলাদেশ থেকে ৬.১৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনেছিল, তবে তা ক্রয় করার সময় কোনও মূল্য পরিশোধ করেনি। বার্টার ৫ এর পুরো বকেয়াগুলো বার্টার ৬ এ স্থানান্তরিত হয়েছিল। ১৯৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হওয়া বার্টার ৬ চুক্তিটি ৬.২৬ মিলিয়ন ডলারে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
১৯৯৫ সালের মার্চ ৩১ এ কোনো লেনদেন ছাড়াই বার্টার ৬ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে বেইজিংয়ে বাংলাদেশি দূতাবাস চীনের উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের কাছে বাকি বকেয়া পরিশোধের জন্য কয়েকবার যোগাযোগ করেছে, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এখন বিলটি সুরক্ষিত করার জন্য সোনালী ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন ডিভিশন (এফআইডি) এর যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান বলেন, এটি অনেক পুরানো ঘটনা। এই মুহূর্তে আমি সঠিকভাবে এই তথ্যটি স্মরণ করতে পারছি না।
তবে সোনালী ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে প্রথম বার্টার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৭৭ সালের ১২ আগস্ট। চুক্তির আওতায় সোনালী ব্যাংককে বাংলাদেশের পক্ষে এবং বিদেশি বাণিজ্য ব্যাংককে উত্তর কোরিয়ার পক্ষে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।
১৯৯৪ সালে বার্টার ৬ এর স্বাক্ষরের পরে উভয় ব্যাংকই স্ব স্ব দেশগুলোর পক্ষে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। সোনালী ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন ডিভিশন (এফআইডি) এর কাছে পাঠানো চিঠিতে জানায় যে উত্তর কোরিয়ার ফরেন ট্রেড ব্যাংক ২০১২ সালের ৩০ জুন স্বীকার করেছে যে বাংলাদেশ তাদের কাছে ১০.৪ মিলিয়ন বা ৮৯ কোটি টাকা পায়। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই টাকা পরিশোধের জন্য বলা হলেও তারা তা ফেরত দেয়নি।
বার্টার চুক্তির আওতায় উত্তর কোরিয়া বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানি করেছিল সেগুলো হলো: চাল, সিমেন্ট, চা, পাট ও পাটজাত পণ্য, ইউরিয়া সার, পশুর চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, সাবান, ডিটারজেন্ট, টয়লেট্রিজ ও গ্লিসারিন।
Leave a reply