ভয়াবহ হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার চার বছর আজ। এদিন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গি হামলায় ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন, ভারতীয় একজন ও বাংলাদেশি তিন নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গিদের অবস্থান দুর্বল হলেও পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়নি বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে তাদের কার্যক্রম। বৈশ্বিক এ সমস্যা মোকাবেলায় সমন্বিত ও পরিকল্পিত কার্যক্রমের পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের। এদিকে নিম্ন আদালতে এ মামলার বিচার কাজ শেষ হলেও এখনো শুরু হয়নি উচ্চ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া।
এক বছরের বিচার কাজ শেষে গত বছরের ২৭ নভেম্বর ৭ জনকে ফাঁসি ও একজনকে খালাস দিয়ে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। এসময় পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ক্ষুন্ন করা, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বিনষ্ট করা ও বাংলাদেশে আইএস’র অস্তিত্ব জানান দিতেই এই হামলা চালানো হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সবারই একই অপরাধপ্রবনতা ছিলো; তাই অনুকম্পা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সের উপর শুনানির অপেক্ষায় আছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ বলেন, দায়রা জজ আদালত ও ট্রাইবুন্যাল যেসব মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে থাকেন সেই সব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। এই মামলার যাতে দ্রুত শুনানি হয় তার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দাবি, নিয়মিত অভিযানের ফলে দুর্বল হয়ে গেছে উগ্রবাদিদের সাংগঠনিক কাঠামো। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে এখনো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। তাই কঠোর নজরদারি রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, সবাইকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এবং অধিকাংশ ধরা পড়েছে। ফলে তাদের সেই সাংগাঠনিক কাঠামো ও সক্ষমতা নেই। তারপরও আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই।
র্যাবের পরিচালক (গোয়েন্দা) লে.কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের তৎপরতা অনেক বাড়িয়েছি। আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বর্বর ওই হামলার এত বছর পরও সক্রিয় উগ্রবাদীরা। করোনা সংকটের সময়ে আবারও সক্রিয় হওয়ার শঙ্কা আছে তাদের। তাই দেশীয় জঙ্গিদের বৈশ্বিক যোগাযোগ বন্ধের ওপর বিশেষ জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, এই সময় অসহায় মানুষকে জঙ্গি তৎপরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এবং সশস্ত্র জঙ্গিদলে নিতে পারে। সুতরাং আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ, নৃশংস জঙ্গি হামলা প্রত্যক্ষ করে বাংলাদেশ। এদিন রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারীতে জঙ্গি হামলায় ১৯ বিদেশি নাগরিক, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় ২২ জনে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় দীর্ঘ দুই বছরের তদন্তে ২১ জনের সংশ্লিষ্টতা পায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এর মধ্যে ১৩ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হলে বাকী আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় তদন্ত সংস্থা।
ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন বছর ও চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হলি আর্টিজান মামলার রায় হয়। রায়ে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন— গাইবান্ধার জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, নওগাঁর আসলাম হোসেন ওরফে আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ, কুষ্টিয়ার আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, জয়পুরহাটের হাদীসুর রহমান ওরফে সাগর, বগুড়ার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও রাজশাহীর শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ। খালাস দেওয়া হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে।
Leave a reply