কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে ত্রাণ নিয়ে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও অপ্রতুল ত্রাণের কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। এ নিয়ে ভীষন চাপে রয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলাগুলো থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বরাদ্দ প্রদানের কথা বলা হলেও অনেক জনপ্রতিনিধি বরাদ্দ পাননি বলে জানিয়েছেন। বন্যার ৮ম দিন পেরিয়ে গেলেও অনেক জায়গায় পৌঁছেনি বানভাসীদের জন্য পাঠানো কাঙ্ক্ষিত ত্রাণ সামগ্রী।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার শুরুতেই ২০৩ মেট্রিক টন চাল ও ৩৬ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ২ কোটি টাকা ও ২ হাজার টন চালের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
ইতোধ্যে আবারও ২ লক্ষ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পেয়েছি। আমরা সবার সাথে সমন্বয় করেই ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নগুলোতে বরাদ্দ পাঠাচ্ছি। যদি ব্যত্যয় ঘটে তাহলে সেটিও আমরা সমন্বয় করে ঠিক করবো।
এদিকে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি। ব্রহ্মপূত্র নদের পানি কিছুটা কমলেও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনও বিপদসীমার উপরে পানি অবস্থান করায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে আছে। শনিবার বিকেলে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি কমে গিয়ে চিলমারী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়ায় ১৯ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি ব্রীজ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
টানা ৮দিন ধরে বন্যার পানি অবস্থান করায় সংকটে রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। শনিবার জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় নানা অসঙ্গতি। বন্যায় আক্রান্তের তুলনায় অনেক ইউনিয়নে দেয়া হয়েছে কম বরাদ্দ। ভীষণ চাপে রয়েছেন সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা।
নাগেশ্বরীর নদীবেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন বল্লভের খাসের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন জানান, আমরা এখনও বন্যার্তদের তালিকা চুড়ান্ত করিনি। উপজেলা থেকে তার ইউনিয়নে ত্রাণের কোনো বরাদ্দ আসেনি বলে তিনি দাবি করেন।
নাগেশ্বরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাছুম জানান, বল্লভের খাসসহ আমরা বন্যায় আক্রান্ত প্রতিটি ইউনিয়নে ৬০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দিয়েছি। আমি নিজেই ওই ইউনিয়নে দুদিন আগেই ৫০টি পরিবারে ত্রাণ দিয়েছি।
একই অভিযোগ চিলমারীর অস্টমীর চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তালেবের। তিনি জানান, আমার ইউনিয়নে ৩ হাজার পানিবন্দি পরিবারের জন্য এখনও কোনো ত্রাণ বরাদ্দ পাইনি।
এ ব্যাপারে ব্যস্ততার কারণে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ডব্লিউ এম রায়হান শাহ-এর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন জানান, আমার ইউনিয়নে ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি। আমি মাত্র ২শ’ প্যাকেট ত্রাণ পেয়েছি। যা আজ (শনিবার) বজরা কলেজ মাঠে বিতরণ করছি। তিনি জানান, ৯টি ওয়ার্ডে বিভাজন করতে গিয়ে কোন কোন ওয়ার্ডে মাত্র ৮ থেকে ১০টি পরিবারে ত্রাণ দিতে পেরেছি। এখন কলেজ মাঠে শত শত পরিবার ত্রাণের জন্য চাপ দিচ্ছে।
এই উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নে ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি। আমি বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র ৩শ’ প্যাকেট।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জানান, সবার সিদ্ধান্ত অনুসারে রেসিও করে ইউনিয়নগুলোতে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তার উপজেলায় ইউনিয়নগুলোতে কত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার সংখ্যা জানেন না তিনি। এ ব্যাপারে ত্রান বিভাগে খোঁজ নিতে বলেন তিনি।
রাজারহাট উপজেলার সবচেয়ে পানিবন্দি ও ভাঙ্গন কবলিত বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে ৭শ’ পরিবারের মধ্যে ৪শ’ পরিবার ত্রাণ পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পানিবন্দি ২ হাজার ১শ’ পরিবারের মধ্যে মাত্র ৪শ’ পরিবারে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হয়েছে। এখনও ১৭শ’ পরিবার ত্রাণের আওতার বাইরে রয়েছে।
কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার বন্যা কবলিত ৩টি ইউনিয়নে পানিবন্দি ১৭ হাজার ২৫০টি পরিবার। ত্রাণ বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২ হাজার ৯শ’ পরিবারের জন্য।
চর রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবিরুল ইসলাম জানান, কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা মানুষকে সহযোগিতা করে আসছি। চলমান বন্যায় রাজিবপুর ইউনিয়নে ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে ১ হাজার ৫০টি পরিবার, কোদালকাটি ইউনিয়নে ৬ হাজার ২৫০টি পরিবারের মধ্যে ৯শ’ পরিবার এবং মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে ৬ হাজার পানিবন্দি পরিবারের মধ্যে সাড়ে ৯শ পরিবারে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। আমরা আরও ৫০ মেট্রিকটন চালের চাহিদা দিয়েছি।
Leave a reply