করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক না এলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারতে দৈনিক প্রায় তিন লাখ মানুষ আক্রান্ত হবে। চলমান পরিস্থিতি না বদলালে বিশ্বে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে পৌঁছে যাবে দেশটি। পেছনে ফেলে দেবে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়াকে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি হবে সবচেয়ে ভয়াবহ। করোনাভাইরাস নিয়ে ভারতের জন্য এ উদ্বেগের কথা শোনাল যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। ৮৪টি দেশে বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের (৪৭৫ কোটি) ওপর সমীক্ষা চালিয়ে উদ্বেগজনক এ পূর্বাভাস দিয়েছে এমআইটি’র স্লোয়ান স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট।
গবেষণায় এমআইটি জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণে আরও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেখা দেবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আমেরিকায়। আগামী আট মাসে। গবেষকদের পূর্বাভাস, কোনো কার্যকরী টিকা না বের হলে আগামী শীতের শেষ দিকে ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হবে দৈনিক দুই লাখ ৮৭ হাজার মানুষ। আর আগামী মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছবে ২০ থেকে ৬০ কোটির মধ্যে।
স্লোয়ান স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের গবেষকরা এ সমীক্ষা চালাতে গিয়ে দুটি বিশেষ মডেল ব্যবহার করেছেন। একটি, ‘এসইআইআর (সাসেপ্টেবল, এক্সপোজ?ড, ইনফেকশাস, রিকভার্ড)’। অন্য মডেলটি পুরোপুরি গাণিতিক। কোনো সংক্রামক ব্যাধির সংক্রমণ কতটা হতে পারে, তার আঁচ পেতে যে মডেলটি ব্যবহার করে থাকেন এপিডিমিয়োলজিস্টরা। এমআইটি’র অধ্যাপক হাফিজুর রহমানদাদ ও জন স্টারম্যান এবং পিএইচডি প্রার্থী সে ইয়াং লিম বিশ্বের ১০ দেশের দৈনিক সংক্রমণের পূর্বাভাস তালিকা তুলে ধরেছেন। তাদের সমীক্ষা জানিয়েছে, টিকা না বেরলে আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় সব দেশকেই টপকাবে ভারত। তার ঠিক পরেই থাকবে আমেরিকা। ওই সময় আমেরিকায় করোনায় দৈনিক আক্রান্ত হবেন ৯৫ হাজার মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা হবে ২১ হাজার। ইরানে ১৭ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৩ হাজার। এর পরেই থাকবে যুক্তরাজ্য, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, ফ্রান্স ও জার্মানি।
এ পূর্বাভাস করতে গিয়ে গবেষকরা তিনটি সূচকের কথা মাথায় রেখেছিলেন। প্রথমত, এখন কী হারে কোভিড পরীক্ষা হচ্ছে আর তার ফলাফল কী? দ্বিতীয়ত, ১ জুলাই থেকে কোভিড পরীক্ষার হার দিনে ০.১ শতাংশ বাড়লে কী হবে? তৃতীয়ত, কোভিড পরীক্ষার হার যদি এখনকার মতোই থাকে আর যদি একজন সংক্রমিত সর্বাধিক আরও ৮ জনকে সংক্রমিত করেন, তা হলে কী হবে? জবাবও দিয়েছে এমআইটি, যত বেশি কোভিড পরীক্ষা হবে, ততই সংক্রমণ রোখা সহজ হবে। পরীক্ষার হার এখনকার মতোই থাকলে বিশ্বের ৮৪টি দেশে আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হবে সাড়ে ১৫ কোটি। আর কোভিড পরীক্ষার হার দিনে ০.১ শতাংশ বাড়লে ওই ৮৪টি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আগামী ৮ মাসে বেড়ে হবে ১৩ কোটি ৭০ লাখ।
যদিও কলকাতার চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞদের একাংশ এমআইটি’র এ সমীক্ষাকে ততটা গুরুত্ব দিতে রাজি নন। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলছেন, ‘আমি এমআইটি’র অংক কষে একটা সংখ্যা বলে দেয়াকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। আমাদের সরকার এ রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে কিছু ব্যবস্থা নেবেন। এ সমীক্ষায় মানুষ অযথা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন।’
এমআইটি আরও জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় গোটা বিশ্বেই গলদ থেকে যাচ্ছে। আক্ষরিক অর্থে, আক্রান্ত বা মৃত্যুর সঠিক হিসাব দেয়া হচ্ছে না। গবেষকরা বলেছেন, ‘আমাদের হিসাবে ১৮ জুন পর্যন্ত বিশ্বে সংক্রমিত হয়েছেন ৮ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ মানুষের। যা সংক্রমণের সরকারি হিসেবের চেয়ে ১১.৮ গুণ বেশি। আর মৃতের সংখ্যার সরকারি হিসাবের চেয়ে ১.৪৮ গুণ বেশি।’ অথচ, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ জুন পর্যন্ত বিশ্বে সংক্রমিত হয়েছেন ৮২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। মৃতের সংখ্যা ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬১০।
Leave a reply