চরম দুঃসময়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের হাল ধরেছেন টিম পেইন। অথচ একসময় পেইনের নিজের দশাই ছিল খুব ভয়াবহ। তিনি ভয় পেতেন ব্যাটিংয়ে নামতে। মানসিক যন্ত্রণায় কাতর থাকতেন সব সময়। না পারতেন খেতে, না পারতেন ঘুমাতে। অসহায়ত্বে ঘরে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনায় নিজের জীবনের সেই দুঃস্বপ্নের অধ্যায় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ান এই অধিনায়ক।
পেইনের অভিষেক হয় ২০০৯ সালে ওয়ানডে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দিয়ে। তার শুরুটা হয়েছিল দারুণ। তিনি নিয়মিত ওপেনিংয়ে ব্যাট করে রান করছিলেন, উইকেটের পেছনেও ছিলেন স্বচ্ছন্দ। পরের বছর টেস্ট অভিষেকও হয়ে যায় তার। টেস্ট খেলার শুরুতে ভালোই দেখাচ্ছিলেন সম্ভাবনার ঝলক। অস্ট্রেলিয়ার কিপিং গ্লাভস দীর্ঘসময়ের জন্যই তার হাতে দেখছিলেন অনেকে।
তারপরেই নেমে আসে চোটের থাবা। ব্রিজবেনে একটি প্রদর্শনী ম্যাচে বাঁহাতি ফাস্ট বোলার ডার্ক ন্যানেসের ১৪৮ কিলোমিটার গতির বল ছোবল দেয় পেইনের আঙুলে। মাঠের বাইরে ছিটকে পড়েন তিনি। জাতীয় দল তো বটেই, একসময় তাসমানিয়া রাজ্য দল থেকেও লম্বা সময়ের জন্য বাইরে চলে যান।
শুধু ওই চোটই নয়, একের পর এক চোটে সাতবার অস্ত্রোপচার করাতে হয় তার। আরও ছোটখাটো চোট তো ছিলই। সেসব অনেকেরই জানা। তবে তার মনের চোটের কথা জানতেন কম লোকই। এতোদিনে তা প্রকাশ করলেন পেইন।
পেইন জানান, ‘ট্রেনিং ও খেলা শুরু করার পর অবস্থা খুব খারাপ ছিল না। কিন্তু গতিময় বোলারদের খেলতে গিয়েই বিপত্তির শুরু। যখনই বোলার দৌড় শুরু করত, আমার কেবলই মনে হতো, আবার না আঙুলে লাগে! আত্মবিশ্বাস পুরো হারিয়ে ফেললাম। ব্যাটিংয়ের সময় বল দেখার বদলে কেবল ভাবনায় থাকত যে গায়ে লাগবে বা কী না জানি হয়!’
তিনি জানান, ‘লম্বা সময় ধরে রান করতে পারছিলাম না। খেতে পারছিলাম না, ঘুমাতে পারছিলাম না। প্রতিটি ম্যাচের আগেই নার্ভাস লাগত। ভয়ঙ্কর সময় ছিল তখন। খেলায় আমার পালা যখন আসত, অসহ্য লাগত। কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম যে ব্যর্থ হব। কেউই জানত না আমার মানসিক অবস্থা, সবচেয়ে কাছের বন্ধুও নয়, এমনকি আমার সঙ্গিনীও নয়।’
পেইন আরও বলেন, ‘আমার মনে আছে, এমনও দিন গেছে, সে (তখনকার বান্ধবী ও এখন স্ত্রী বনি) কাজে গেছে, আমি সোফায় বসে আক্ষরিক অর্থেই কাঁদছি। চিৎকার করে নয়, তবে কান্না করেছি। খুবই বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতা সেটি, ব্যাখ্যা করা কঠিন। কেবলই মনে হচ্ছিল, অনেক মানুষকে হতাশ করে চলেছি আমি।’
পরবর্তীতে পেইন জানালেন, ‘তাসমানিয়ার ক্রীড়া মনোবিদের কাছে যাওয়ার পর নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করি। সেটিই প্রথমবার, কাউকে নিজের অবস্থার কথা বলেছি। মিনিট বিশেক কথা হয়েছিল তার সঙ্গে। মনে পড়ে, তার কক্ষ থেকে বের হওয়া মাত্র ভালোবোধ করতে শুরু করলাম। মনে হলো, আরও আগে তার কাছে যাওয়া উচিত ছিল আমার। এটির সঙ্গে লড়াইয়ের প্রথম পদক্ষেপই হলো সমস্যা মেনে নেওয়া ও এটা জানানো যে সাহায্য লাগবে।’
সেই পেইন ৭ বছর পর ২০১৭-১৮ অ্যাশেজে নাটকীয়ভাবে ডাক পান অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে। পরিস্থিতির কারণে পেয়ে যান নেতৃত্ব। হয়ে ওঠেন বিপর্যয়ের সময় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ত্রাতা।
ইউএইস/
Leave a reply