তরিকুল ইসলাম হিমেল, ফরিদপুর
ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলায় গোপালপুর ফেরি ঘাট, ওপারে দোহার এলাকার চরমইনুট ঘাট। জেলার তিন উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ ঢাকা যাওয়া আসার জন্য এই রুটটি ব্যবহার করে থাকেন।
বর্তমানে এই নৌ রুটে পারপারের জন্য মাধ্যম রয়েছে ট্রলার ও স্পিডবোট। যাত্রীরা ঘাট ইজারাদারের কাছে জিম্মি, হয়রানির শিকার এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাধ্য হয়ে ইজারাদার কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হচ্ছে যাত্রীদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে হাজার খানেক মানুষ এই রুটে পদ্মা পাড় হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানে পদ্মা পাড় হতে স্পিডবোটে সময় লাগে ১৮ মিনিটের মত আর ট্রলারে ঘণ্টাখানেক। ১৮ মিনিটের এই যাত্রায় ঘাট ইজারাদার স্পিডবোটের যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সন্ধ্যায় এবং আবহাওয়া খারাপ হলে এই ভাড়া দ্বিগুণ, তিনগুণ পর্যন্ত হয়ে যায়। অপর দিকে ট্রলার ভাড়া নেয়া হয় ১৬০ টাকা করে। যাত্রীদের অভিযোগ দেশের অন্যান্য ঘাটের তুলনায় এই ভাড়া অনেক বেশি। নানা অযুহাতে এখানে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। বোটে নেই পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, যাও বা আছে তা নোংরা, অস্বাস্থ্যকর। প্রতি ঈদে যাত্রীদের জিম্মি করে কয়েকগুণ পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হয়।
করোনার লকডাউনের আগে এখানে স্পিডবোটে ভাড়া নেয়া হতো ১৭০ টাকা, পাশাপাশি ট্রলারের যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিত ১০০ টাকা। যদিও ফরিদপুর জেলা প্রশাসক এর ১২/০৮/২০১৮ইং তারিখের ০৫.১২.২৯০০.০১০.৯৯.০১৩.১৬-৩৩৩নং স্বারকের এক পত্রে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার(রাজস্ব ) মো. নুরুন্নবী স্বাক্ষরিত এক পত্রে চরভদ্রাসন মইনুট ফেরিঘাটে যাত্রী পারাপারের হার তথা তোলা/ভাড়া নির্ধারণ করা হয় যাত্রী প্রতি স্পিড বোটে ১৬০ টাকা এবং ট্রলারে ৮০ টাকা। এছাড়া ঘাটে ভাড়ার রেট চার্ট টাঙানোর পাশাপাশি দিনে ও রাতে একই ভাড়া নেওয়া এবং নৌযানে লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। এর পরে সরকারি ভাবে ভাড়া বাড়ানোর কোন চিঠি পাওয়া যায়নি। দিনে রাতে একই ভাড়া নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও সন্ধ্যার পর নদী পার হতে যাত্রীদের নিকট হতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ঘাট মালিকদের বিরুদ্ধে।
ঘাট পরিচালনার অন্যতম অংশীদার এসএম শাহীন আনোয়ার বলেন, লকডাইনের পরে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। প্রতিটি স্পিডবোটে ও ট্রলারে ধারন ক্ষমতার কম যাত্রী নেওয়া হচ্ছে, তাই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। যাত্রী হয়রানী ও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়টি অসত্য বলে দাবি করেন তিনি।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা বলেন, বর্তমান ঘাট মালিকদের বিরুদ্ধে ভাড়া বৃদ্ধি ও যাত্রী হয়রানির অনেক অভিযোগ রয়েছে। করোনা লকডাউনের ভেতরে ঘাটমালিকরা গোপনে ভাড়া বৃদ্ধি করে যাত্রী পারাপার করেছে। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা কয়েকবার মোবাইল কোর্ট করেছি।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাত্রী হয়রানী বন্ধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. নুরুন্নবী বলেন, ২০১৮ সালের ভাড়া চুক্তির পরে আর কোন ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে জানা নেই। ইজারাদার ইচ্ছেমত ভাড়া বাড়াতে পারবে না। এবং চুক্তি অনুযায়ী ভাড়ার চার্ট টাঙিয়ে রাখতে হবে।
ফরিদপুর ৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেন, ঘাটের অতিরিক্ত ভাড়া ও অনিয়মের বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলেছি।
Leave a reply