সারা দেশে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত ১৫ হাজার ৭৯৭ শয্যার মধ্যে ১১ হাজার ৩৯৮টি খালি পড়ে আছে। অর্থাৎ মোট শয্যার ৭২ দশমিক ১৬ শতাংশই ফাঁকা।
একইভাবে বর্তমানে ৮৩টি আরটি পিসিআর ল্যাবে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হলেও নমুনা পরীক্ষা আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৪ হাজার ৮২০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর আগে ২০ থেকে ২১ হাজার পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশে নমুনা পরীক্ষার হার কমেছে, পাশাপাশি খালি হয়ে পড়েছে হাসপাতাল শয্যা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, মানুষের ভেতর ভয়টা কমেছে এবং সচেতনতা বেড়েছে বলেই এখন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। অনেকেই টেলিমিডিসিন নিয়ে বাড়িতে বসে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তিনি বলেন, কারিগরি দিক থেকে আমাদের কোনো স্বল্পতা বা সীমাবদ্ধতা নেই। দেশের বেশির ভাগ জেলায় আরটি-পিসিআর মেশিন পৌঁছানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত কিট মজুদ আছে। কিন্তু মানুষ এখন আর আগের মতো নমুনা পরীক্ষা করাতে আসছে না। এক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার ফি একটি কারণ হতে পারে। তাছাড়া করোনার প্রকোপ প্রাথমিক পর্যায়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা না দিলেও এখন অনেক হাসপাতাল দিচ্ছে। তাই সচ্ছলদের অনেকেই বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৪ হাজার ৮২০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সর্বমোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৮৮টি। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২২, মোট শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
হাসপাতালে রোগী ভর্তির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে মোট কোভিড-শয্যার বিপরীতে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ রোগী আছে। ফাঁকা পড়ে আছে ৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ শয্যা। ময়মনসিংহে ১৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শয্যায় রোগী এবং ফাঁকা ৮৩ দশমিক ৯১ শতাংশ শয্যা। চট্টগ্রামে ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশে রোগী এবং ৬৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ফাঁকা। রাজশাহীতে ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ রোগী ভর্তি, ফাঁকা ৮৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। রংপুরে ২০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ ভর্তি, ফাঁকা ৭৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ শয্যা। খুলনায় ভর্তি ৩৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, ফাঁকা ৬৪ দশমিক ৮২ শতাংশ শয্যা। বরিশালে ভর্তি ৪০ দশমিক ১৭ শতাংশ, ফাঁকা ৫৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সিলেটে ৩৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভর্তি, ফাঁকা ৬৫ দশমিক ১৬ শতাংশ শয্যা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার ৭ হাজার ৪২ সাধারণ শয্যা এবং ৩০১টি আইসিইউ শয্যার বিপরীতে মোট রোগী ভর্তি আছেন যথাক্রমে ২ হাজার ১১১ এবং ১৯৭ জন। এ হিসাবে সাধারণ শয্যার বিপরীতে ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং আইসিইউ শয্যার বিপরীতে ৬৫ দশমিক ৪৪ শতাংশে রোগী ভর্তি আছেন। যা মোট শয্যার ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ বর্তমানে মোট শয্যার ৬৯ দশমিক ৫৭ ভাগ শয্যাই খালি রয়েছে।
রাজধানী ঢাকার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ২১৬ শয্যার মধ্যে ১৩০ জন, পাঁচশ’ শয্যাবিশিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৮৫ শয্যায় ২৩০ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এবং বার্ন ইউনিটের ৯০৭ শয্যায় ৫৯৮ জন, পাঁচশ’ শয্যার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ৩৩০ শয্যায় ১৩৫ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১ হাজার ২৭ শয্যায় ২২৩ জন, বিএসএমএমইউতে ৩৮৭ শয্যায় ২০০ জন, বাবুবাজারের ঢাকা মহানগর হাসপাতালে ১০৫ শয্যায় সাতজন, মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ১০ শয্যায় একজন, মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতালে ১২৫ শয্যায় ২৭ জন, কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতালের ৩০ শয্যায় একজনও রোগী নেই। ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ১৫৩ শয্যায় ৮৯ জন, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ৭২ শয্যায় ২৬ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১৭৪ শয্যার বিপরীতে ১৪০ জন রোগী ভর্তি আছেন। অর্থাৎ সরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ৮২১ শয্যার বিপরীতে ১ হাজার ৮০৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এ হিসাবে মোট শয্যার বিপরীতে ৪৭ দশমিক ২৬ শতাংশ রোগী ভর্তি আছেন, ফাঁকা ৫২ দশমিক ৭৪ শতাংশ শয্যা।
এদিকে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৪৩০ শয্যায় ১৩৩ জন, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ২১০ শয্যায় ৬০ জন, বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতালে ২০১৩ শয্যায় ৩১ জন, আসগর আলী হাসপাতালে ২০৪ শয্যায় ৭৩ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৯৯ শয্যায় ৬৯ জন, ইবনে সিনায় ৪০ শয্যায় ২০ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৮১ শয্যায় ৪১ জন, এভার কেয়ারে ৪২ শয্যায় ৩৬ জন এবং ইমপালস হাসপাতালে ৪০০ শয্যায় ৩৯ জন রোগী ভর্তি আছেন। অর্থাৎ বেসরকারি হাসপাতালের ৩ হাজার ৫১৯ শয্যার বিপরীতে ৫০২ জন রোগী ভর্তি আছেন। এ হিসাবে মোট শয্যার বিপরীতে ১৪ দশমিক ২৬ শতাংশ রোগী ভর্তি আছেন, ফাঁকা ৮৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ শয্যা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের ১ হাজার ৫৬৭ সাধারণ শয্যা এবং আইসিইউ ৬৪ শয্যার বিপরীতে যথাক্রমে ২৩৯ ও ১৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। মোট ১ হাজার ৬৩১ শয্যার বিপরীতে ২৫৬ জন রোগী ভর্তি আছেন। এ হিসাবে মোট শয্যার বিপরীতে ১৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ রোগী ভর্তি আছেন। ঢাকা বিভাগের ৮ হাজার ৯৭৪ শয্যার বিপরীতে রোগী আছেন ২ হাজার ৫৬৪ জন। এ হিসাবে মোট শয্যার বিপরীতে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে রোগী ভর্তি আছেন। ফাঁকা ৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ শয্যা।
ময়মনসিংহ বিভাগের ৪৯৭ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ৮০ জন। এ হিসাবে ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশ শয্যায় রোগী আছেন। ফাঁকা ৮৩ দশমিক ৯১ শতাংশ শয্যা।
চট্টগ্রাম বিভাগের ২ হাজার ৫৫৪ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ৮০০ জন। এ হিসাবে চট্টগ্রামে মোট শয্যার বিপরীতে ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশে রোগী ভর্তি আছেন এবং ৬৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ফাঁকা।
রাজশাহীতে ১ হাজার ৩২৭ শয্যায় ১৯১ রোগী ভর্তি আছেন। এ হিসাবে মোট শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ রোগী এবং ফাঁকা ৮৫ দশমিক ৬১ শতাংশ শয্যা।
রংপুরে ৭৭৭ শয্যার বিপরীতে ১৫৬ জন ভর্তি আছেন। এ হিসাবে মোট শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ, ফাঁকা ৭৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ শয্যা।
খুলনায় ৭৭৩ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ২৭২ জন। এ হিসাবে মোট শয্যার বিপরীতে ভর্তি ৩৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, ফাঁকা ৬৪ দশমিক ৮২ শতাংশ শয্যা।
বরিশালে ৪৫৩ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ১৮২ জন। এ হিসাবে মোট শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ৪০ দশমিক ১৭ শতাংশ, ফাঁকা ৫৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সিলেটে ৪৪২ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ১৫৪ জন। এ হিসাবে মোট শয্যার বিপরীতে ৩৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভর্তি, ফাঁকা ৬৫ দশমিক ১৬ শতাংশ শয্যা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আক্রান্তদের অধিকাংশই বাড়িতে অবস্থান করছেন। খুব জটিলতা দেখা না দিলে তারা হাসপাতালে যাচ্ছেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ মৃদু হওয়ায় অধিকাংশ বাসাবাড়িতেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
এ কারণে হাসপাতালে তাদের ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। টেলিমেডিসিন সেবায় সুফল মিলেছে। এ কারণে বাসাবাড়িতে অবস্থান করে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। এতে করে তাদের হাসপাতালে যাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছন।
Leave a reply