টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমের বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগই নেই। অথচ তার বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এ ঘটনায় হয়েছে মামলাও।
ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের বাসাইলে। বিদ্যুতের সংযোগ নেই, তিনি শুধু আবেদন করেছিলেন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য। কিন্তু তার নামে এক লাখ ১৪ হাজার ৬২৭ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। ভুক্তভোগী শ্যামলা বেগম উপজেলার জেলার কাশিল ইউপির দাপনাজোর হাকিমপুর গ্রামের মৃত আবদুল সবুর মিয়ার স্ত্রী।
জানা যায়, ভূক্তভোগীর না আছে সেচ প্রকল্প, না আছে খুঁটি, না আছে বিদ্যুতের সংযোগ। অথচ প্রায় পাঁচ বছর পর তার নামে অবাঞ্চিত বিল এবং বিল খেলাপির দায়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীনে টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ কর্তৃপক্ষ মামলাও দায়ের করেছেন।
বৃদ্ধার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের শেষের দিকে বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা যুবলীগের বর্তমান আহ্বায়ক পৌর এলাকার মশিউর রহমান বিদ্যুত নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ লাইনের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) টাঙ্গাইলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর অধীনে আবেদন করেন শ্যামলা বেগম।
ওই সময় দাপনাজোর হাকিমপুর, দেউলী ও মুড়াকৈ এলাকার ১২ জনের কাছ থেকে সেচ মেশিনের বিদ্যুতের লাইন পাইয়ে দিতে স্থানীয় শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে মশিউর রহমান বিদ্যুত বিভিন্ন খরচ বাবদ ১১ লাখ টাকা নেয়। পরের বছর ১১ জনের বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেও শুধুমাত্র শ্যামলা বেগম বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত হন বলে অভিযোগ করেন।
তার পরিবার জানায়, দূরত্বের অজুহাতে ওই সময় তাদের সংযোগ দেয়া হবে না এবং ওই নামের সংযোগটি বাতিল বলে সংশ্লিষ্টরা চলে যায়। সম্প্রতি সেচ পাম্পের বিপরীতে শ্যামলা বেগম নামে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬২৭ টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ।
শুধু এতেই শেষ নয়। টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ (বিউবো) এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলী বাদি হয়ে টাঙ্গাইলের ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) বিদ্যুৎ আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেন। এ মামলায় আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বিবাদি বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে শ্যামলা বেগম বলেন- ১১ জন বিদ্যুৎ সংযোগ পেল, অথচ আমি পেলাম না। সেচ মেশিনে বিদ্যুতের লাইনের জন্য ৮০ হাজার করে টাকা গেল, আবার ভৌতিক বিলও আসলো। বৃদ্ধ বয়সে আমাকে মামলায় জড়ানো হল। আমি এই হয়রানীর বিচার কোথায় পাবো?
বিদ্যুৎ লাইন পাইয়ে দেয়ার ব্যাপারে টাকা লেনদেনকারী স্থানীয় মাধ্যম শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে আমার হাত দিয়েই ১২টি সেচ সংযোগের জন্য বাসাইলের মশিউর রহমান বিদ্যুতকে ১১ লাখ টাকা দিলেও ১১টি সংযোগের ব্যবস্থা করে দেয় সে। ওই সময় বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা বলেন, শ্যামলা বেগমের সংযোগ বাতিল হয়ে গেছে। গত পাঁচ বছরে তার নামে কোনো বিদ্যুৎ বিলও আসেনি। হঠাৎ করেই শ্যামলা বেগমের নামে বিল বকেয়া সংক্রান্ত বিদ্যুৎ বিভাগের মামলার সমন এসেছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ লাইন পাইয়ে দিতে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা গ্রহণকারী বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা যুবলীগের বর্তমান আহবায়ক মশিউর রহমান বিদ্যুত বলেন, খরচ বাবদ ১২ জনের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয় এবং ৯টি সেচে বিদ্যুৎ লাইন দেয়া হয়। বাকি ৩টির বিষয়ে আমার জানা নেই। শুনেছি এরমধ্যে দুইটি নিজ দায়িত্বে খুঁটি এবং তার কিনে সংযোগ নিয়েছে। শ্যামলা বেগমের লাইন না পাওয়ার বিষয়টি সখিপুর অফিসকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছিলো।
শ্যামলা বেগমের ছেলে সুরুজ্জামান বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা একটি সেচ মেশিন করার পরিকল্পনা করে বিদ্যুৎ লাইন আনার জন্য আবেদন করি। তখন নানা অযুহাতে আমাদের লাইনটি বাতিল হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চলে যায়। প্রায় পাঁচ বছর পর আমার মায়ের নামে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভাগের মামলার নোটিশ আসে। তারা মামলার কপির সাথে বিদ্যুৎ বিল পাঠিয়ে দেন। অথচ সেচ মেশিন বা বিদ্যুৎ লাইনের কোন অস্তিত্বই নাই।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মহসিনুজ্জামান বলেন, ‘বিদ্যুৎ লাইনের জন্য শ্যামলা বেগম আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ খুঁটি স্থাপন বা কোন তারও টানায়নি, সংযোগও দেয়নি। তারপরও শ্যামলা বেগমের নামে বিদ্যুৎ বিল খেলাপি মামলা হয়েছে। এই মামলা থেকে বৃদ্ধা শ্যামলা বেগমকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
মামলার বাদি টাঙ্গাইল পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর সহকারী প্রকৌশলী মো. সাইমুম শিবলী বলেন, সখীপুর বিদ্যুৎ অফিসের কনজুমার শ্যামলা বেগম। ২০১৮ সালে সখীপুর বিদ্যুৎ অফিসকে টাঙ্গাইলের অর্ন্তভুক্ত করা হয়। তৎকালীন সময় থেকে তার নামে অদ্যাবধি বিল বকেয়া ছিলো। তার সঙ্গে অসংখ্য বার যোগাযোগের চেষ্টা করার পর বকেয়া বিলের কনজুমার হিসেবে তার নামে মামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে টাঙ্গাইল পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদত আলীর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Leave a reply